বিলাসী গল্পের কাহিনী সংক্ষেপ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

 





লেখকের উত্তম পুরুষের জবানিতে ‘বিলাসী’ গল্পের কাহিনী বিধৃত হয়েছে। লেখক নিজে এ গল্পের একটি চরিত্র। বাল্যকালে তিনি দূরের স্কুলে পড়তেন। কয়েকজন সাথী মিলে স্কুলে যেতেন, যাদের মধ্যে মৃতুঞ্জয় একজন। স্কুলে যাবার পথে তারা পাকা আম, বইচি ফল, কাঠাল ইত্যাদি দেখতে দেখতে যেতেন। লেখাপড়ার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না। 


মৃত্যুঞ্জয় কথা বলত কম। আপন ভুবনে সে ডুব মেরে থাকত। লেখাপড়ায় মোটেই ভাল ছিল না। সংসারের সচ্ছলতা তার ছিল। তার মন ছিল উদার। অনেকেই তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করত। মৃত্যুঞ্জয়ের মা-বাবা, ভাই-বোন কেউই ছিল না। আম বাগানের মাঝে একটা পোড়ো বাড়িতে সে বাস করত। তার এক জ্ঞাতি খুড়া ছিল। সে তার দুর্নাম রটনা করে বেড়াত। সে নিজে রান্না করে খেত। আম বাগান জমা দিয়ে ভালভাবেই তার দিন কাটত। অনেকেই তার কাছ থেকে উপকার আদায় করত কিন্তু কেউই তার সাথে সম্পর্ক স্বীকার করত না। গ্রামে তার দুর্নাম ছিল অনেক।.


মৃত্যুঞ্জয় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে সারিয়ে তোলে একজন মুসলমান বাবা ও তার মেয়ে। মেয়েটির নাম বিলাসী। লেখক একদিন লুকিয়ে সাঁঝের আঁধারে মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে গেলেন। মৃত্যুঞ্জয় মেঝেতে শুয়ে আছে। শরীর তার কংকালসার। বিলাসী মাথার কাছে বসে পাখার বাতাস করছে। মৃত্যুঞ্জয় আস্তে আস্তে তার রোগের বিবরণ দিল। দেড় মাস রোগ ভোগের পর সে এখন কিছুটা সুস্থ। এখনও ওঠে বসতে পারে না। বিলাসীর সেবা-যত্নেই সে সেরে উঠেছে।


দু'মাস পর জানা গেল মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে বিয়ে করেছে। বিলাসী ভিন্ন জাতের মেয়ে। তাকে বিয়ে করে তার হাতে রাঁধা ভাত খেয়ে মৃত্যুঞ্জয় জাত খুইয়েছে। তার খুড়া বদনাম রটাতে লাগল। মৃত্যুঞ্জয় যে অন্ন পাপে পাপী সে কথা বলে বেড়াতে লাগল।


একদিন রাতের বেলা দশ-বার জন লোক মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে ঢুকে বিলাসীকে মারধোর করতে লাগল। তারা বিলাসীকে মারধোর করে গ্রামের বাইরে রেখে এল। মৃত্যুঞ্জয়কে তারা ঘরে আটক করে রাখে, তাই সে বিলাসীকে রক্ষা করতে পারেনি।


এ ঘটনার পর মৃত্যুঞ্জয় বাড়ি ছেড়ে মালপাড়ায় চলে যায় এবং সেখানে ঘর বাঁধে। মৃত্যুঞ্জয় এখন পুরা দস্তুর সাপুড়ে হয়ে গেছে। সে সাপ ধরে বেড়ায়। তাবিজ, কবজ বিক্রি করে। বিলাসী কিন্তু সাপ ধরা বিদ্যাকে পছন্দ করত না। কারণ সে জানত সাপ ধরা কৌশলমাত্র। কোন মন্ত্র বা তাবিজ-কবজ ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। যে কোন সময় সাপের কামড়ে প্রাণ যেতে পারে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর নিষেধ শোনেনি।


একদিন সাপ ধরতে গিয়ে মুত্যুঞ্জয় সাপের ছোবলে আহত হয়। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না, সে মারা গেল। বিলাসী বিরহ বেদনায় অস্থির হয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করল।


বুড়ো খুড়ো বাগানবাড়িটা দখল করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। সে বলে বেড়াতে লাগল যে অন্ন পাপেই মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছে। সকলে তা বিশ্বাসও করল। কিন্তু প্রেমের মাহাত্ম্য কেউই উপলব্ধি করতে সমর্থ হল না।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন