হুজুর কেবলা' গল্পের মূল বিষয়বস্তু আলোচনা করো ।

 



প্রশ্ন-৪. 'হুজুর কেবলা' গল্পের মূল বিষয়বস্তু আলোচনা করো ।

বা 'হুজুর কেবলা' গল্পে তথাকথিত পীরদের ভণ্ডামি ও প্রতারণার যে মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে তা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করো ।

উত্তর : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ব্যঙ্গগল্প রচয়িতা আবুল মনসুর আহমদ জনপ্রিয় ব্যঙ্গ সংকলন ‘আয়না’। এ গ্রন্থের 'হুজুর কেবলা' গল্পে লেখক তথাকথিত পীর এবং দরবেশদের প্রতারণা ও ভণ্ডামির মুখোশ উন্মোচন করে তাদেরকে শাণিতভাবে ব্যঙ্গ করেছেন। ধর্মব্যবসা যে নিরীহ ও অজ্ঞ মানুষকে শোষণ করার একটি মোক্ষম হাতিয়ার, তা এ গল্পে পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান প্রবল ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদের সমাজকে যে কলুষিত করছে তা এমদাদের ভাষ্যের মধ্য দিয়ে ‘হুজুর কেবলা' গল্পে উঠে এসেছে।

 

ধর্মকে অবলম্বন করে ব্যবসা করবার প্রথা সুপ্রাচীনকাল থেকে এদেশে চলে এসেছে। দরগা, আশ্রম, পীর-বাবা আঞ্জুমান ইত্যাদির সাথে প্রত্যেক বাঙালি পরিচিত। বর্তমান যুগে ধর্মব্যবসার ধরন পাল্টে গেলেও এর করাল গ্রাসে আজও মানুষ নিপতিত হচ্ছে। আবুল মনসুর আহমদ এ ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্যে 'হুজুর কেবলা' গল্পে প্রথমেই শিক্ষিত এমদাদকে নিয়ে এসেছেন।

এমদাদ দর্শন বিষয়ে পড়াশোনা করে। উচ্চ শিক্ষার স্পর্শে এবং উন্মুক্ত চিন্তা-আবহে এমদাদ গড়ে ওঠে স্বকীয় সত্তা হিসেবে। প্রচলিত ধর্ম, খোদা, রাসুল এসব কিছু সে না মেনে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাসি-তামাশা করত একসময়, সে চলাফেরায়ও ছিল পুরোপুরি আধুনিক। হঠাৎ করে এমদাদের জীবন-আচরণ পাল্টে যায়। চশমা ও রিস্টওয়াচ মাটিতে আছড়ে সে ভেঙে ফেলে দেয়। ক্ষুর স্ট্রপ, শেভিংস্টিক ও ব্রাশ অনেকখানি রাস্তা হেঁটে নদীতে ফেলে দেয় এবং টুথক্রিম ও টুথব্রাশ পায়খানার টবের মধ্যে ফেলে দেয়। তারপর সে কোরা খদ্দরের কলিদার কোর্তা ও সাদা লুঙ্গি পরে, মুখে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ ঝাঁকড়া দাড়ি নিয়ে, সামনে-পেছনে সমান করে চুল কাটা মাথায় গোল টুপি কান পর্যন্ত পরে, চটিজুতা পায়ে দিয়ে কলেজ ছেড়ে বাড়ি মুখে রওনা দেয়। এমদাদের এ পরিবর্তনের মূল কারণ হলো খেলাফত আন্দোলনে যোগদান। খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের পরে সে ধর্মভীরু হয়ে যায়। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পাশাপাশি নফল নামাজও পড়ে। তাছাড়া সবসময় তসবিহ পাঠ করে। এমদাদের এ ধর্মভীরুতাকে ব্যঙ্গ করে লেখক লিখেছেন— ‘সে ভয়ানক নামাজ পড়িতে লাগিল। বিশেষ করিয়া নফল নামাজ সে একেবারে তন্ময় হইয়া পড়িল । গোল-গোল করিয়া বাঁশের কঞ্চি কাটিয়া সে নিজ হাতে একছড়া তসবিহ তৈরি করল। সেই তসবির উপর দিয়া অষ্টপ্রহর অঙ্গুলি চালনা করিয়া সে দুইটা আঙ্গুলের মাথা ছিঁড়িয়া ফেলিল।'

প্রাগৈতিহাসিক গল্পের শিল্পমূল্য দেখুন

এমদাদ যতই ইবাদত করার চেষ্টা করে ততই ইবাদতে সে মগ্নতা আনতে পারে না। তাই ইবাদতে আরও মগ্ন হওয়ার জন্যে সে উপায় খোঁজে। এমদাদ স্থানীয় কংগ্রেস ও খেলাফত কমিটির সেক্রেটারি হওয়ায় প্রত্যহ সকাল-বিকাল বহু মওলানা— মৌলবি সমবেত সভায় যোগদান করতে হতো। সেখানে এক সুফি সাহেবের সঙ্গে তার পরিচয় হয় যিনি এক পীর সাহেবের স্থানীয় খলিফা ছিলেন। এ সুফি সাহেবের মাধ্যমে এমদাদ জানতে পারেন, পীরের মুরিদ না হলে কোনো ইবাদতে কাজ হয় না। তিনি আরও জানান, ‘জয়া ও সলুক খতম করিয়া ফানা ও বাকা লাভে সমর্থন হইয়াছেন এরূপ কামেল ও মোকাম্মেল, সালেক ও মজযুব পীরের দামন না ধরিয়া কেহ জমিরের রওশনী ও রুহের তরক্কী হাসেল করিতে পারেন না।'

এমদাদ সুফি সাদুল্লাহর কথা শুনে পীরের সন্ধান পাওয়ার জন্যে যখন ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তখনই সুফি সাহেব বলেন, ‘জওহরের তালাশে যারা জীবন কাটাইয়াছে, তারা ব্যতীত আর কে জওহরের খবর দিতে পারে? হাজার শোকর খোদার দরগায়, বহু তালাশের পর তিনি জওহর মিলাইয়াছেন।' সুফি সাহেবের এ কথায় এমদাদ আশ্বস্ত হয়ে জওহর পীর সাহেবের কাছে বয়াত হওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তখনই এ গল্পের প্রভাবশালী চরিত্র এক ভণ্ড পীর সাহেবের আবির্ভাব ঘটে।

সুফি সাহেব এমদাদকে পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যায়। এমদাদ দেখে একতলা পাকা বাড়ির বৈঠকখানায় পীর সাহেব অপেক্ষাকৃত একটি উচ্চ আসনে বসে তামাক টানছে আর একদল লোক তাকে ঘিরে জানু পেতে বসে আছে। পরিচয়ের পূর্বেই পীর সাহেব সুফি সাহেবকে জানালেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন সুফি সাহেব এমদাদের রুহের সুপারিশের জন্যে এখানে এসেছেন এবং এক মিনিট চোখ বন্ধ করে ধ্যানস্থ থেকে জানালেন – 'সে এই ঘরেই আছে।' পীর সাহেবের আধ্যাত্মিক এ শক্তি দেখে এমদাদ ভক্তি বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে ওঠে। এমদাদ বুঝতে পারে এবং বিশ্বাস করে চোখ বুঝে পীর সাহেব সবকিছু বলে দিতে পারে। তার এ বিশ্বাস আরও প্রবলতর হয় যখন চোখ বন্ধ করে পীর সাহেব দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কত বছর হইল এখানে বসিয়া আছি?' জনৈক মুরিদ বললেন, 'হযরত, বৎসর কোথায়? এ না কয়েক ঘণ্টা হইল।' তখন পীর সাহেব জানান যে, এখানে আসার পর তার রুহ সাত হাজার বছর ঘুরে এসেছে। পীর সাহেবের এ অলৌকিক কথাবার্তা শুনে মুরিদরা যখন হা করে তাকিয়ে থাকে তখন সে তাদেরকে আশ্বস্তের বাণী শুনিয়ে বলেন, 'কিন্তু ইনশাআল্লাহ, যখন তোমরা মোরাকেবারে-নেতে-বায়নানার্সে তালিম লইবে, তখন অপরের নেসবত সম্বন্ধে তোমাদের কলব আয়নার মত রওশন হইয়া যাইবে।' পীর সাহেবের এ আকর্ষণীয় মিথ্যা আশ্বাস শুনে এমদাদ ও মুরিদরা ভক্তি ও শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে ওঠে। পীর-দরবেশের মতো ধর্মব্যবসায়ীদের সাথে সামন্তবাদীদের যে একটি নিবিড় সম্পর্ক থাকে আবুল মনসুর আহমদ সেটিকেও এ গল্পে উন্মোচন করেছেন। পীর-দরবেশরা বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় মোড়ল কিংবা মাতব্বরদের বাড়িতে থেকেই সে এলাকার মানুষদের বিভ্রান্ত করে। আর খেটে খাওয়া মানুষদের নিজের আয়ত্তে আনার জন্যে সুস্বাদু খাবারেরও আয়োজন করা হয়। এ গল্পেও সে বিষয়টি উঠে এসেছে। দূরবর্তী একস্থানে মুরিদগণের দাওয়াতে পীর সাহেব যে প্রস্তুতি নিয়ে গেলেন তার বর্ণনায় লেখক লিখেছেন, ‘প্রকাণ্ড বজরায় একমন ঘি, আড়াইমন তেল, দশমন সরু চাউল, তিনশত মুরগী, সাতসের অম্বুরি তামাক এবং তের জন শাগরেদ লইয়া পীর সাহেব মুরিদানে রওয়ানা হইলেন।'

স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য এখানে

পীর সাহেব সেখানে রাজা-বাদশাহর মতো অভ্যর্থনা পেয়ে মোড়লের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তার সফরসঙ্গী এমদাদ সেখানে তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে এবং তার এ পর্যবেক্ষণেই পীর সাহেবের কুৎসিত রূপটি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশের আড়ালে যে নারীদের প্রতি উন্মত্ত এক পাশবিক লোভ থাকে তা পীর সাহেবের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। পীর সাহেব সন্ধ্যায় পুরুষদের নিয়ে মজলিশে বসতেন কিন্তু নারীদের নিয়ে মজলিশে বসতেন এশার নামাজের পর এবং নারীদের মজলিশে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ ছিল। মজলিশে ওয়াজ করার সময় পীর সাহেবের প্রায়ই জবা আসত যাকে মুরিদগণ ‘ফানাফিল্লাহ’ বলত। জবার সময় সে ‘জ্বলিয়া গেলাম’ 'পুড়িয়া গেলাম' বলে চিৎকার করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তেন। এ সময় তার হাত-পা টিপে দেওয়ার নির্দেশ ছিল। মেয়েদের দ্বারা হাত-পা টিপানোর এক মনোবাসনায় সে মেয়েদের মজলিশেই জয়ার অভিনয় করত।

ভণ্ডপীরদের দ্বারা যে শুধু নিরীহ মানুষরাই প্রতারিত হয় তা নয়, অনেক সময় বিত্তশালীরাও তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। যেমন অসহায় হয়েছে এ গল্পের রজব ও তার স্ত্রী কলিমন। মেয়ে মজলিশে ওয়াজ করার সময় পীর সাহেবের বাড়িওয়ালার ছেলে রজবের সুন্দরী স্ত্রী কলিমনের দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। সে মজলিশেই ঘনঘন কলিমনের দিকে কামার্ত দৃষ্টিপাত করে। কলিমনকে সে নিজের স্ত্রী করার জন্যে এক ভয়ানক ফাঁদ পাতে। সে হঠাৎ করে ঘোষণা দেয় যে দু-এক দিনের বেশি সে আর এ গ্রামে থাকবে না। তখন সবাই তাকে কেরামতে নেসবতে বায়নান্নাস দেখানোর অনুরোধ করে। পীর সাহেবও রাতেই মোরাকাবা বসানোর কথা বলে। মোরাকাবার আসর বসলে কে মোরাকাবায় বসবে তা জিজ্ঞেস করা হলে এমদাদ মোরাকাবায় বসার কথা বলে। কিন্তু এমদাদের দ্বারা তার মনের পাশবিক আশা পূরণ হবে না জেনে সে তাকে বিদ্রূপ করে বসিয়ে দেয়। সে বলে যে রুহানী তরক্কী হাসেল করতে পেরেছে সেই মোরাকেবায় বসতে পারে। তখন সে তার ভণ্ডামির সাহায্যকারী সুফি সাহেবকে মোরাকাবায় বসার জন্যে নির্দেশ দেয় । পীর সাহেবেরই একজন সাগরেদ জানান যে, সুফি সাহেবের মধ্যে হযরত মুহম্মদ (স)-এর রুহ আনা হোক এবং সকলেই সাগরেদের কথায় সায় দেয়। সুফি সাহেবের বুকের দুটি বোতাম খুলে পীর সাহেব তার দৃষ্টি সেখানে নিবদ্ধ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুফি সাহেব শরীর কাঁপিয়ে হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে মূর্ছিতের ন্যায় বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। পীর সাহেব সকলকে বলতে লাগলেন হযরতের রুহ তাশরিফ এনেছে সকলে উঠে কেরাম করো। সকলে কেরাম শেষে বসতে গেলে তিনি ধমকের সুরে সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন এবং হযরতকে কে সওয়াল করবে তা জানতে চান। এমদাদ সওয়াল করার কথা বললে পীর সাহেব তার সিনা সাফ হয় নি বলে আবারও বিদ্রুপ করে। তখন পীর সাহেবের অন্যতম খলিফা মওলানা বেলায়েতপুরী এগিয়ে এসে জানতে চান, তাদের পীর সাহেব নুরে-ইদানির জওয়াশা কেন সহ্য করতে পারে না। সুফির মুখে জবাব আসে পীর সাহেবের শরীয়ত হাসিল হয় নি। তখন পীর সাহেব তার কী করতে হবে বলে জানতে চাইলে তাকে চতুর্থ বিয়ে করার কথা বলে। শুধু তাই নয়, সে পীর সাহেবকে রজবের স্ত্রী কলিমনকে বিয়ে করার কথা বলে। কলিমনকে বিয়ে করার যুক্তিস্বরূপ সে বিভিন্ন ধরনের আজগুবি মিথ্যা কথা বলতে থাকে। সে বলে যে, বেহেশতে সে কলিমনের ছবি দেখে এসেছে, পীর সাহেব এতটাই ধূর্ত ছিলেন যে, কলিমনকে বিয়ে করার পথে কোনো জটিলতা যাতে না থাকে সেজন্যে সুফির মুখ দিয়ে রজবকে স্ত্রী তালাক দেয়ার কথা বলে। তারপর আমি চলিলাম বলে হযরতের রূহ চলে যায়। সুফি সাহেব এক বিকট চিৎকার করে ওঠে। সবাই তাকে বাতাস করতে থাকে।

ইন্দো- ইউরোপীয় ভাষা বংশ আলোচনা ক্লিক করুন

গ্রাম্য সহজ-সরল মুরিদগণ আখেরাতের ভয়ে পীর সাহেবকে কলিমনকে বিয়ে করার অনুরোধ করে। সবার অনুরোধ, আদেশ, তিরস্কার ও উৎপীড়নে রজব এক বছর আগে বিয়ে করা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আর কলিমনের ঘন ঘন মূর্ছিত হওয়ার মাঝেও পীর সাহেবের সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। এ ভণ্ডামি দেখে এমদাদ চেতনা ফিরে পায়। সে রাগে ও ক্রোধে শয়তান বলে পীরের মেহেদিরঞ্জিত দাড়ি ধরে হেঁচকা টান মারে। মুরিদরা সবাই এমদাদকে ধরে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। তখন পীর সাহেব নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত রাখতেই এমদাদকে পাগল বলে চালিয়ে দেন। সে জানায় 'ও পাগল। ওর মাথা খারাপ। ওর বাপ ওকে আমার হাতে সঁপিয়া দিয়াছিল। অনেক তাবিজ দিলাম কিন্তু কোন ফল হইল না, খোদা যাকে সাফা না দেন, তাকে কে ভালো করিতে পারে?'

আবুল মনসুর আহমদ আমাদের সমাজে প্রচলিত ভণ্ড পীরদের আসল চরিত্রকে অত্যন্ত সার্থকতার সাথে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এ গল্পে। এছাড়া ভণ্ডামির শিকড়কে উপড়ে ফেলার জন্যেই যেন এমদাদকে এ গল্পে নিয়ে এসেছেন। প্রতিবাদী এমদাদ হুজুরের দাড়ি ধরে টান দেয়ার মধ্য দিয়ে লেখক পীরদের ভণ্ডামি কীর্তিকলাপের নাড়ি ধরে টান দিয়েছিলেন। সাধারণ লোকদের আকর্ষণ করার জন্যে পীরদের মিথ্যা আত্মপ্রচারকেও এ গল্পে ব্যঙ্গ করেছেন। যে পীর রুহকে ছেড়ে দিয়ে পৃথিবীর সাত হাজার বছরের ঘটনা দেখতে পেয়েছেন, সে ভণ্ড পীর তার দাড়ি ধরে এমদাদের টান মারার মুহূর্তটি মোটেও দেখতে পেলেন না। তাছাড়া তৎকালীন ভারতীয় মুসলমানদের কাবুল নির্ভরতা, মওলানাদের ভাষা ব্যবহার ও অসহযোগ আন্দোলনের বাড়াবাড়িকেও ‘হুজুর কেবলা' গল্পে ব্যঙ্গ করা হয়েছে

স্বার্থে আঘাত আসার কারণে বিদ্রোহী হয় তা এ গল্পে স্পষ্ট। এছাড়াও এ গল্পে সেসব রাজনীতিকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে যারা ভীত হওয়ার কারণে দেশের স্বাধীনতার জন্যে বিদ্রোহ না করে সামাজিক আচার- অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বুলি আওড়িয়ে দাম ও নাম বাড়াবার চেষ্টা করে ।

একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, সাহিত্য সমাজের দর্পণস্বরূপ। সমাজের বাস্তবতা সাহিত্যে আয়নার মতোই স্পষ্ট হয়। 'আয়না' গল্পগ্রন্থের বিভিন্ন গল্পেও সমকালীন ভারতবর্ষের যথাযথ চেহারা তুলে ধরা হয়েছে। নজরুলের ভাষ্যমতে, যেসব মানুষ মুখোশ পরে সমাজে অবাধে বিচরণ করে তাদের চেহারাই যেন আমরা গল্পগুলোতে দেখতে পেয়েছি। গল্পে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরাও সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা দেখতে পাই। আমাদের সমাজকে শান্তিময় ও সার্থক করে তোলার জন্যে; আমাদের সমাজের এ বীভৎস রূপটি দেখানোর প্রয়াসেই লেখক 'আয়না' গ্রন্থের গল্পগুলো রচনা করেন এবং তিনি তা যথাযথভাবে রূপায়ণ করতেও সক্ষম হয়েছেন। আমাদের সমাজের বাস্তবতার ছবিগুলো এ গ্রন্থের গল্পগুলোতে দেখতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয় না। ফলে আবুল মনসুর আহমদ এর ‘আয়না' গ্রন্থের নামকরণটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন