আধুনিক গীতিকবিতায় বিহারীলাল; ভোরের পাখি
বিহারীলাল; বাংলা গীতিকবিতায় ভোরের পাখি বিহারীলাল চক্রবর্তী; বাংলা গীতিকবিতার স্রষ্টা বিহারীলাল
উত্তর :- বিহারীলাল বাংলা সাহিত্যে এক
অবিস্মরণীয় নাম। বিহারীলাল ভোরের পাখি যেমন ভোরের আলো আবির্ভাবের পূর্বে আপন নিকুঞ্জে
আপন সূর্যে উদিত হয়, ঠিক একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলা সাহিত্যে বিহারীলাল(১৮৩৫-৯৪) আর্বিভাব।
তিনি প্রথম মৌলিক কবি, যার হাত দিয়ে আধুনিক গীতিকবিতার পদচারণা শুরু হয়। গীতি কবির
ভাব রস নিমগ্র আত্মচেতনা, গভীর ব্যঞ্জনাময় চিত্র কল্প নির্মাণ, উপমা, রূপক, ও প্রতীকির
সুক্ষ্ন ব্যবহার এবং সহজ সরল ও অকৃত্রিম ভাষার প্রয়োগ তাঁর কবিতাকে করে তুলেছে স্বতন্ত্র্য
মণ্ডিত ও নতুন অভিজ্ঞানে অভিসিক্ত। বিহারীলালের সময় শিল্প বিচার আমাদের আলোচ্য বিষয়
নয়; রবীন্দ্রনাথ কেন বিহারীলালকে ভোরের পাখি বলেছেন? এটা আমাদের আলোচ্য বিষয়। / আধুনিক
গীতিকবিতার প্রবর্তক হিসেবে বিহারীলালের অবদান কতটুকু তা নিচে আলোচনা করা হল।
কবি হৃদয়ের একান্ত অনুভূতি যখন গীত বা সংগীতের
আবেগে স্পন্দিত হয়ে কবিতা আকারে আত্ম প্রকাশ করে তখন-ই হয়ে ওঠে গীতি কবিতা। ইংরেজি
কবিতায় ব্যবহৃত Lyric প্রত্যয়টি বিহারীলালের কাব্যের সাথে গভীর ভাবে স্পৃক্ত।
লিরিক কথাটি ইংরেজী Lyric হতে উদ্ভূত। শব্দের অর্থ বীণা জাতীয় যন্ত্র বা তার
তার বিশেষ যে সবল কবিতা আকৃতিতে ও প্রকৃতিতে এমন যে তাদের শুধু বীণা সহযোগে গান করা
চলে সে গুলো হচ্ছে গীতিকবিতা, বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে প্রথমবারের মত বিমুগ্ধ গীতি কবিতার
স্বর বিহারীলাল চক্রবর্তীর কাব্য বাশরীতে ধ্বনিত হয়েছিল।
বিহারীলালের পূর্বে বা সমসাময়িক কালে খ- কবিতা লেখা হয়েছে সত্য, অনেক সময় তাতে
কবির আত্মগত ভাবনা প্রকাশিত হলেও তাকে সার্থক গীতিকবিতা বলা যায় না। এছাড়া মধ্যযুগের
বৈষ্ণব পদাবলেিত মানবিক অনুভূতির প্রকাশে অনেক সময় গীতিকবিতার লক্ষণ ফুটে উঠলেও তা
মূলত; রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে। বিহারীলালের সম- সাময়িককালে
মাইকেল মধুসদন দত্ত(১৮২৪-৭৩)এর আত্মবিলাপ ‘বঙ্গভূমির প্রতি’‘চতুর্দশপদী
কবিতাবলী’তে গীতিকবিতার লক্ষণ দেখা যায়। এ ছাড়া হেমচন্দ্র (১৮৩৮-১৯০৪), নবীবচন্দ্র
(১৮৪৭-১৯০৯) প্রমুখ কিন্তু খ- কবিতা রচনা করলেও বিহারীলালের কবিতাতে গীতি কবিতার সংজ্ঞা
ও স্বরূপে প্রথম স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
আমরা গীতিকবিতায় কবির আত্মবিস্মৃতি কল্পনার
প্রকাশ বিস্তার, যন্ত্রণার তীব্রানুভব প্রত্যাশা করি। বিহারীলালের সমসাময়িক কবিরা যেন
অতিরিক্ত বীর স্থির-, সুস্থ ও বুদ্ধিমান, কিন্তু বিহারীলাল আত্মবিস্মৃতি কবি। এ অর্থে
তিনি একজন গীতিকবি।
বলাকা কাব্যে গতিবাদ দেখুন
আধুনিক গীতি কবিতার
লক্ষণ হচ্ছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, আত্মভ্যাস সাধনা, নিজেস্ব মনোজগৎ সৃষ্টি, আদর্শ
ও বাস্তবের সমন্বয় সাধন, খণ্ডলোকের অবাধ মুক্তি, সৌন্দার্য মাধুর্যেও শিল্প সংগত প্রকাশ,
বৈচিত্র্য বিস্ময় ও দুরাভিসারের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা বিশ্বজনীনতা, প্রকৃতিপ্রীতি ,
বাস্তু তন্ময়তা থেকে ভাবময়তা, প্রভৃতি হচ্ছে আধুনিক গীতিকবিতার লক্ষণ, বিহারীলালের
কাব্যে এ সমস্ত লক্ষণ গুলো আছে। তাই তিনি সমসাময়িক কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও ব্যতিক্রম।
বিহারীলাল বাংলা গীতিকবিতার
ভোরের পাখি, ভোরের পাখি যেমন দিবসের আলোকজ্জ্বল আবির্ভাবের পূর্বে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা
করে বিহারীলাল তেমনি বঙ্গ সাহিত্যকুঞ্জে সবার অজান্তে তাঁর নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করেন,
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্য-- “সেই প্রত্যুষে অধিক লোক জাগে নাই, এবং সাহিত্য
কুঞ্জে বিচিত্র কলগীতি কুজিত হইয়া ওঠে নাই। সেই উষা লোকে কেবল একটি ভোরের পাখি সুমিষ্ট
সুন্দর সুরে গান ধরিয়াছে । সেই সুর তাহার নিজের। (বিহারীলাল আধুনিক সাহিত্য)
রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালকে বাংলা কাব্য কুঞ্জের ভোরের পাখি বলেছেন। পাখি আপন আনন্দে
গান গায়, অপরকে শোনাবার জন্য নয়। অপরে শুনে যে আনন্দ পায় তা একান্ত ব্যক্তিক, পাখির
উদ্দেশ্য আনন্দ দেয়া নয়, গান গাওয়া। তাই ড: শশীভূষণ দাসগুপ্ত বিহারীলাল সর্ম্পকে বলেন, “উদয়মান নবীন
মূখ্যের একটি অস্ফুট আভাস দেওয়াই ভোরের পাখির কাজ।”
রবীন্দ্রনাথের মতে, বিহারীলাল তখন ইংরেজি ভাষায় নব্য শিক্ষিত কবিদের ন্যায় যুদ্ধ
বর্ণনা, সঙ্কুল মহাকাব্য,উদ্দীপনাপূর্ণ দেশানুরাগমূলক কবিতা লিখলেন না, এবং পুরাতন
কবিদের ন্যায় পৌরাণিক আখ্যানের দিকে গেলেন না, তিনি নিভৃতে বসিয়া নিজের ছন্দে নিজের
মনের কথা বলিলেন। তাঁর সেই স্বগত উক্তিতে বিশ্বহিত, দেশহিত বা সভা মনোরঞ্জনের কোন উদ্দেশ্য
দেখা গেল না। তিনি ছিলেন গতানুগতিক কাব্য ধারায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র্যের অধিকারী। আধুনিক
যুগের সূত্রপাতে আখ্যান কাব্যের যে ব্যাপক চর্চা সাধিত হচ্ছিল বিহারীলাল তার সাথে সংযোগ
রাখেন নি। গীতিকবিতায় যে ব্যক্তি ভাবের পরিচয় মিলে চতুর্দশপদী কবিতাবলীতেও তা ঘটে।
সনেট ও গীতি কবিতায় পর্যায়ভূক্ত। মধুসূদন ছিলেন মহাকবি তাঁর মহাকাব্যেও ভাব, ভাষা,
ছন্দ, উপমা, শব্দ প্রভৃতি ছিল গুরু গম্ভীর। এ কবিতার ভাব, ভাষা, ছন্দ, উপমা প্রকাশ
ভঙ্গি সহজ সরল সংগীত মাধুর্যকে বুকে পাষাণ চাপা দিয়েছে। বিহারীলাল পাষাণ ভাব থেকে বাংলা
কাব্যকে উদ্ধার করলেন । এখানে মধুসূদন ও বিহারীলালের মধ্যে পার্থক্য।
নজরুল কাব্যে সাম্যবাদ এখানে
বিহারীরালের প্রকাশিত
বিভিন্ন কাব্য গুলো আলোচনা করে গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করা হল। সঙ্গীত শতক (১৮৬২),
নিসর্গ সন্দর্শন (১৮৭০), বন্ধু বিয়োগ (১৮৭০), প্রেম প্রবাহিনী (১৮৭০), বঙ্গসুন্দরী
(১৮৭০), সারদা মঙ্গল (১৮৭৯), সাধের আসন (১৮৮৯) প্রভৃতি কাব্যে বিহারীলালের বৈশিষ্ট্য
বিকশিত।
১৮৬২সালে বিহারীলালের ‘সঙ্গীত শতক’ কাব্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলা গীতিকবিতার র্পূণ উদ্বোধন
ঘটে। বিহারীলাল রোমান্টিক কবি। তাঁর কাব্য সাধনার শুরুতেই রোমান্টিক কবিভাবনার বিচিত্র্য
বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে
একপল না দেখিলে
এন যেন হূ হূ করে,
কোন বিনোদন আর
ভালো লাগে না অন্তরে,
কি যেন হইয়ে যায়
আমি যেন আমি নাই।”
প্রেমের জন্য কাতরতার
তীক্ষ্ণ প্রকাশ ঘটেছে বঙ্গ সুন্দরী(১৮৭০) কাব্যে। বিহারীলাল ভোরের পাখি তাঁর প্রথম
সার্থক সুর আমরা শুনতে পাই ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যে। এ কাব্যে বঙ্গের নর-নারীর বিভিন্ন বিষয় গীতি
কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এ কাব্যে প্রথম গীতি কবির বেদনাবিদ্ধ হৃদয়ের গীতোচ্ছ্বস
পূর্ণতা লাভ করেছে। এখানে এসে কবি বললেন -
“সবর্দায় হূ হূ করে মন
বিশ্ব যেন মরুর মতন
চারিদিকে ঝালাপালা
উঃ কি জলন্ত জ্বালা
অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গ পতন।
রোমান্টিক কবিরা বর্তমানের
তুচ্ছতা থেকে বাস্তবের রূঢ়তা থেকে দূরে থাকেন । যা প্রত্যক্ষ ও স্পষ্ট তা রোমান্টিক
কবিকে পীড়িত করে। ভারত বর্ষের এক অস্থির যুগ যন্ত্রণার সময় বিহারীলালের কবি মানসের
উন্মোচন ঘটেছে। সিপাহী বিদ্রোহের সমসাময়িক সময়ে নাগরিক জীবন যন্ত্রণার যে বেদনাপাল্পুত
আবেগ তাঁর কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। এ জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্ত পেয়ে কবি প্রকৃতির রহস্য
লীলায় আত্মসম্পূর্ণ করতে চেয়েছেন
“কভূ ভাবি পল্লী গ্রামে যাই,
নাম ধাম সকল লুকাই ,
চাষীদের মত হয়ে,
চাষীদের সঙ্গেতে বেড়াই।”
{বঙ্গসুন্দরী ১ম সর্গ ১৯সংখ্যা কবিতা}
বিহারীলাল কাব্য সাধনার
প্রাথমিক পর্যায় থেকে নিজেস্ব বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে সক্ষম। এ দিক থেকে ‘বন্ধু বিয়োগ’ ও প্রেম
প্রবাহিনী’ কাব্যদ্বয়ে একান্ত বাস্তবতা অনুসারী করে নিজের ও বন্ধুদের জীবনের সাধারণ
ঘটনা উপজীব্য করেছেন। প্রেম প্রবাহিণী কাব্যে শুদ্ধ প্রেমের আকর্ষণে ব্যর্থ কবি বলেছেন
“কিছুতেই যখন তোমারে না পেলাম
একেবারে আমি যেন কি হয়ে গেলাম।”
এছাড়া গীতি ধর্ম কবিতায় ‘বন্ধুবিয়োগ’কাব্যে
দেখি----
“কেউ যদি কোন খানে পাইত আঘাত
সকলের শিরে যেন হত বজ্রাঘাত।”
গীতি কবি বিহারীলালের
শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯)। এ কাব্যে তিনি বিচিত্রভাব কল্পনার সমম্বয়ে
তাঁর অনুভুতিকে প্রকাশ করেছেন। কবির আত্মোপলদ্ধি ও আত্মোবিশ্লেষণ ‘সারদা মঙ্গল’ কাব্যের
উপজীব্য বিষয়। কাব্যের প্রথমে অন্বেষণ এবং কাব্যের শেষ লক্ষ্যে উপনীত ও প্রাপ্তি। অবশ্য
এ কাব্যে কবি রোমান্টিক থেকে মিস্টিক হয়ে গেছেন। এ কাব্যে কবি সারদাকে সরস্বতী রূপে
কল্পনা করেছেন। কবি তাকে কখনো কবি চেতনার উন্মোচন, কখনো প্রেয়সী জয়া, কখনো বা সর্বব্যাপিনী
বিচিত্ররূপী প্রাণ শক্তি রূপে কল্পনা করেছেন। তাই কবি বলেন,
রোমান্টিক কলেবর
টলমল থরথর
প্রপুল পপোল বহি বহে অশ্রুজল
।”
নর-নারীর চিরন্তন কালের
অনন্ত প্রেমই সারদার লীলা স্পন্দন মাত্র। ক্ষণ স্থায়ী জীবনের পানে তাকিয়ে কবির মনে
ক্ষণে ক্ষণে সন্দেহ জেগেছে এত প্রেম, এতস্নেহ,
দয়া মায়া সবই কি ভুল? সবই কি মিথ্যা ?
“তবে কি সকলি ভূল?
নাই কি প্রেমের মূল?
বিচিত্র গগণ ফুল কল্পনা-লতার?
মন কেন রসে ভাসে?
প্রাণ কেন ভালবাসে?
আদরে গলে পরিতে সেই ফুলহার।
{সারদা-২০}
গীতি কবিতা আধুনিক কালে
গীত হয় না। কিন্তু গীতিকবিতার সঙ্গে সংগীতের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। গীতিকবিতার ভাষা,
ছন্দ গতিময়, শব্দ নির্বাচন, বাক্য বিন্যাস এবং স্তবক গঠনের মধ্যে গীতি কবিতার বৈশিষ্ট্য
কাব্য রীতির স্বাতন্ত্র্য ফুটে ওঠে ‘সারদা মঙ্গলে’ সংগীতময়তা ১ম সর্গ থেকে শেষ ৫ম সর্গ পর্যন্ত লক্ষ্য
করা যায়।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যে মৃত্যুচেতনা প্রবেশ করুন
কবির শেষ কাব্য ‘সাধের
আসন (১৮৮৯) ‘সারদা মঙ্গলের’ পরিশিষ্টের মতো ‘সারদা মঙ্গলে’র কল্পনাময়ীকে
কবি ‘সাধের আসনে’ মনে করেছেন
“আকাশ পাতাল ভূমি
সকলি, কেবল তুমি।”
সাধের আসন বিহারীলালের আত্মজৈবনিক মূলক
রচনা। অবশ্য গীতি কবিতার মধ্যে সর্বদা আত্মজৈবনিক উপাদান থাকে। এ কাব্যে অবশ্য লৌকিক
ও অলৌকিক এর অপরূপ সহ অবস্থান ঘটেছে। একদিকে তিনি সারদাকে দেখেছেন জননী, নন্দিনী আর
মিতার মধ্যে, অন্যদিকে তাকে অনুভব করেছেন গ্রহ আর নক্ষত্রপুঞ্জের অসীমতার মধ্যে, কখনো
কখনো ক্ষুদ্র তৃণের মধ্যে। এ রহস্যময় আবিষ্কারই রোমান্টিক গীতি কবির বৈশিষ্ট্য সাধের
আসনে লক্ষণীয়ঃ-
কি কবির কোথা যাব---
কোথা গেলে দেখা পাব----
হৃদি কোমল বামিনী কোথারে
আমার?
কোথা রে প্রাণের আলো
পূর্নিমা চন্দ্রিমা জাল
কোথা সে সুধামাখা মুহাস বয়ান।”
উল্লেখিত কাব্য ছাড়াও
বিহারীলালের ‘নিসর্গ নিদর্শন ’বন্ধুবিয়োগ, ‘বঙ্গসুন্দরী’ প্রভৃতি
কাব্যে আধুনিক গীতি কবিতার লক্ষণ সুস্পষ্ট। ভাব, ভাষা ছন্দ, চিত্রকল্প, রূপক প্রভৃতি
অলংকার ব্যবহারে যথেষ্ট আধুনিক গীতি কবিতার পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালকে
বলেছেন “ভাব নিমগ্ন কবি’।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়,
বাংলা গীতিকবিতায় কবি হৃদয়ের একান্ত মনোময় অনুভূতিকে কাব্যে রূপদানের প্রকৃত সূত্রপাত
বিহারীলালের মাধ্যমে ঘটেছে। বিহারীলাল-ই ব্যক্তি হৃদয়ের আবদ্ধ ও অবরুদ্ধ ভাব কল্পনাকে
সর্বব্যপ্ত করেছেন। তিনি রোমান্টিক মনোবেদনার কল্পনাভিসার ও সৌন্দর্য অনুধ্যানকে শিল্প
সম্মতভাবে তাঁর কবিতায় পরিবেশন করেছেন। এখানে গীতি কবি হিসাবে বিহারীলালের স্বতন্ত্র্য
ও অভিনবত্ব। তাই বলা হয় বিহারীলাল আধুনিক বাংলা গীতি কবিতার প্রবর্তক। আর এ জন্যই রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর তাকে বাংলা সাহিত্যের “ভোরের পাখি” বলেছেন।