প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম, বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম।
১.০১ তৎসম শব্দ
০১. তৎসম অর্থ্যাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃতিক শব্দের বানান যথাযথ অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ এই সব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে।
০২. তবে যেসব তৎসম শব্দে ই,ঈ বা উ,ঊ শুদ্ধ সেই সব শব্দে কেবল ই বা উ বা তাদের কার (ি ু) ব্যবহৃত হবে। যেমন কিংবদন্তি ,চিৎকার, ধমনি, ধূলি ,খঞ্জনি, পদবি, ভঙ্গি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র , উষা।
০৩. রেফ এর পর ব্যঞ্জন বর্ণের দিত্ব হবে না। যেমন , অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা সূর্য।
০৪. সন্ধির ক্ষেত্রে ক,খ,গ,ঘ পরে থাকলে পদের অন্তঃস্থিত ম এর স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে। যেমন অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর হৃদয়ংগম, সংগঠন। তবে অঙ্ক, আকাক্ষা, গঙ্গা, বঙ্গ, লঙ্ঘন, সঙ্গ, সঙ্গী প্রভৃতি সন্ধিবদ্ধ নয় বলে “ঙ” এর স্থানে (ং) হবে না।
২.০১ অ - তৎসম শব্দ
০১. সকল অ তৎসম শব্দ অর্থ্যাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কার চিহ্ন (ি ু )কার প্রযোজ্য হবে। এমন কি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম হবে। যেমন, গাড়ি, চুরি, বাড়ি, শাড়ি,ছুরি, দাবি, হাতি, বেশি, হিজরি, সরকারি, টুপি, হিন্দি, সিঙ্গি, মাষ্টারি, ফিরিঙ্গি, পাখি,কেরামতি, ফরিয়াদি, আসামি, পাগলামি, বিবি,চাচি, মাসি, পিসি,দিদি,উচু,নিচু, মুলা, ইত্যাদি।
অনুরুপ ভাবে আলি প্রত্যয় যুক্ত শব্দে ই-কার যুক্ত হবে। যেমন , খেয়ালি, হেয়াঁলি, মিতালি, বর্ণালি, সোনালি। তবে কোন কোন স্ত্রীবাচক শব্দে ঈ-কার দেওয়া যায়। যেমন, রানী, গাভী, পরী।
সর্বনাম পদরুপে বিশেষণ ও ক্রিয়া- বিশেষণ
পদরুপে কী শব্দটি ঈ-কার যুক্ত হবে। যেমন, কী পড়ছ? কী খেলে?। অন্য ক্ষেত্রে অব্যয় পদরুপে
ই-কার দিয়ে কি শব্দটি লেখা হবে। যেমন, তুমি কি যাবে? পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার
হবে। যেমন, ছেলেটি, বইটি।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা এখানে
ক্ষ
০২. ক্ষীর, ক্ষুর, ক্ষেত শব্দ খির, খুর, খেত না লিখে ক্ষীর, ক্ষুর, ক্ষেত লিখতে হবে। তবে অ তৎসম শব্দ খিদ, খুদে, খিধা খেপা লিখতে হবে।
মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন
০৩. তৎসম শব্দের বানানে ন ও ণ- য়ের সঠিক
বানান মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া অ তৎসম শব্দে এ নিয়ম মানা প্রয়োজন নেই। যেমন, কোরান, ইরান,
কান, সোনা, পরান।
তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ - য়ের পূর্বে নাসিক্য বর্ণ ণ হয়। যেমন, লুণ্ঠন, প্রচণ্ড, কণ্ঠ।
শ স ষ
০৪. তৎসম শব্দে শ স ষ এর নিয়ম মানতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে ষত্ব বিধান প্রযেজ্য নয়। বিদেশী মূল শব্দে শ স-য়ের প্রতিসঙ্গী বর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তাই ব্যবহার করতে হবে। যেমন, সাল, সন, হিসাব, শরবত, শযতান, শার্ট, স্মার্ট, সাদা, পোশাক, বেহেশত নাশতা, কিসমিস, শরম। তৎসম শব্দে ট, ঠ বর্ণের পূর্বে ষ হয়। যেমন, বৃষ্টি, দুষ্টু, পৃষ্ঠা।
০৫. আরবি শব্দ সে (ث) সিন্ (س) সোয়াদ (ص) বর্ণগুলির প্রতিবর্ণ রুপে “স” এবং শিন্ (ش) এর প্রতিবর্ণ “শ” ব্যবহার করতে হবে। যেমন, সালাত, শাবান, মুসলিম, মুসলমান, শাওয়াল, বেহেশত।
০৬. ইংরেজি ও ইংরেজি মাধ্যম থেকে আগত বিদেশি S বর্ণ বা ধ্বনির জন্য “স” এবং sh sion, ssion, tion বর্ণের জন্য “শ” ব্যবহার করতে হবে।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি এই লিঙ্কে
জ য
০৭. বাংলায় প্রচলিত বিদেশী শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনি পদ্ধতি অনুসারে লিখতে হবে। যেমন, কাগজ, জাহাজ, হাজার, বাজার, জুলুম। ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে যে (ز), যাল (ذ),যোয়াদ (ض) যোই (ظ) রয়েছে , যার ধ্বনি ইংরেজি ত এর মত সে ক্ষেত্রে উক্ত আরবি বর্ণগুলির জন্য “য” ব্যবহার করতে হবে। যেমন, ওযু, কাযা, নামায, আযান, মুয়াযযিন, যোহর, রমযান। তবে কেউ ইচ্ছা করলে জ দিয়েও লিখতে পারে। জাদু, জোয়াল, জো ইত্যাদি শব্দ জ দিয়ে লেখা বাঞ্চনীয়।
এ অ্যা
০৮. বাংলায় এ বা ‘এ’ -কার দ্বারা অবিকৃত
এ বা বাঁকা অ্যা এই উভয় উচ্চারণ ধ্বনি নিষ্পন্ন হয় তৎসম বা সংস্কৃতি ব্যাস, ব্যায়াম,
ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি, ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরুপ ভাবে লেখার নিয়ম রয়েছে। অনুরুপ ভাবে তৎসম বা বিদেশী
ছাড়া অন্য সকল বানানে অবিকৃত বিকৃত র্নিবিশেষে এ বা এ কার হবে। যেমন :- দেখে, দেখি,
যেন, জেনো, কেন, কোনো, গেল।
বিদেশী শব্দে অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে
এ বা এ কার হবে। যেমন:- এন্ড, নেট, বেড, শেড।
বিদেশি শব্দে বিকৃত বা বাঁকা উচ্চারণের
জন্য অ্যা ব্যবহৃত হবে। যেমন:- অ্যান্ড, অ্যাসিড, ক্যাসেট, ম্যানেজান, ব্যাক।
ও
০৯. বাংলা অ কারের পরে বহু ক্ষেত্রে ও কার হয়। এই উচ্চারণকে লিখিত রুপ দেওয়ার জন্য ক্রিয়া পদের বেশ কয়েকটি রুপের এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনো আদিতে অনেকে যথাচ্ছেভাবে ‘ও’ কার ব্যবহার করেন। যেমন:- ছিলো, করলো, বলতো, হোলে, যেনো, কেনো ও কার যুক্ত হচ্ছে। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ও কার ব্যবহার করা যাবে না।
ং ঙ
১০. তৎসম শব্দে ং এবং ঙ এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অন্য শব্দে এর বাধ্যকতা নেই। তবে এই ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে ং ব্যবহার করতে হবে। যেমন:- রং, ঢং, পালং, সং। তবে অব্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে ঙ ব্যবহার হবে। যেমন:- বাঙালি, রঙিন, ভাঙা।
রেফ(র্) ও দ্বিত্ব
১১. তৎসম শব্দে অনুরুপ অন্য সকল শব্দে রেফ এর পর ব্যঞ্জন বর্ণে দ্বিত্ব হবে না। যেমন:- কর্জ মর্দ, সর্দার।
বিসর্গ
১২. শব্দের শেষে বিসর্গ বর্জন করতে হবে। যেমন:- প্রধানত, মূলত, প্রায়ত।
আনো প্রত্যায়ান্ত শব্দ
১৩. আনো প্রত্যায়ান্ত শব্দের শেষে ‘ও’ কার ব্যবহার করতে হবে। যেমন:- করানো, খাওয়ানো, বলানো।
বিদেশী শব্দ ও যুক্ত বর্ণ
১৪. বাংলায় বিদেশী বানানে যুুক্ত বর্ণকে বিশ্লিষ্ঠ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যুক্ত বর্ণের সুবিধা হচ্ছে তা উচ্চারণের দ্বিধা দূর করে। তাই এ বর্ণ গুলো কে ভেঙ্গে দেওয়া উচিত নয়। যেমন:- ষ্টেশন, স্ট্রিট, ¯িপ্রট, ¯িপ্রং।
হস্ চিহ্ন
১৫. হস্ চিহ্ন ব্যবহার বর্জন করতে হবে। যেমন:- মদ, কাত, কলকল, ফটফট। তবে যদি ভুল হবার আশংকা থাকে তবে ব্যবহার করা যাবে। যেমন:- যাহ্ উহ্ ।
লেখাটি ডাউনলোড করুন এখান থেকে