সাহসী জননী বাংলা কবিতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।
তোদের অসুর নৃত্য … ঠা
ঠা হাসি … ফিরিয়ে দিয়েছি
ব্যাখ্যা: হিন্দু পুরাণ মতে অসুর শব্দের অর্থ হল দেবতাদের
শত্রু। আর অসুর নৃত্য বলতে কবি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয়তা ও দানবীয় ধ্বংসলীলাকে
বুঝিয়েছেন। তারা অসুরের মত এদেশে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে এবং তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রাণ
হারিয়েছে অসংখ্য নিরীহ বাঙালি। কিন্তু তাদের এই ক্রূর অট্টহাসিকে দামাল বাঙালি বেশিদিন
স্থায়ী হতে দেয় নি। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনীর ক্রূর অট্টহাসি এই জাতি ফিরিয়ে দিয়েছে। দমন করেছে তাদের অসুর নৃত্য।
তোদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে
দিয়েছি নয় মাসে
ব্যাখ্যা: নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা
লাভ করেছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। কবি এই চরণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয়তার
পরাজয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন । বাঙালি পাক হানাদার বাহিনীকে বেশিদিন স্থায়ী হতে দেয় নি বরং
শক্ত হাতে দৃঢ় মনোবলে তাদের ক্রূরতাকে দমন করেছে।
চির কবিতার দেশ …. ভেবেছিলি অস্ত্রে মাত হবে
বাঙালি অনার্য জাতি, খর্বদেহ … ভাত খায়, ভীতু
ব্যাখ্যা: এদেশের প্রতিটি স্তর কবিতায় সমৃদ্ধ। বাঙালি
ও বাংলায় রয়েছে কবিতার প্রাচুর্য। চির কবিতার দেশ বলতে কবি বাংলাদেশকে বুঝিয়েছেন। পাকিস্তানিরা
ধারণা করেছিল যে কবিতা লেখা এই নিরীহ জাতি তাদের অস্ত্রের গর্জনের মুখে পরাধীনতাকে
মেনে নিবে। তাদের মনে হয়েছে ভাত খাওয়া এই জাতি শারীরিকভাবে দুর্বল ও ভীতু জাতি। আমাদের
শৌর্য, সাহস, দৃঢ় মনোবল সম্পর্কে তাদের হীন ধারনা ছিল। হানাদাররা ভেবেছিল খুব সহজেই
আমাদেরকে পরাধীনতার শৃঙ্খল পড়িয়ে যুগের পর যুগ নিপীড়ন করবে। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য
বদ্ধপরিকর বাঙালি তা হতে দেয় নি। দৃঢ় চিত্তে দমন করেছে পাকিস্তানি হানাদারদের। মুক্তিযুদ্ধে
শোচনীয় ভাবে হায়েনাদের পরাজিত করেছে এবং ছিনিয়ে এনেছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতার বিশ্লেষণ এখানে
কিন্তু কী ঘটল শেষে, কে দেখাল মহা প্রতিরোধ
ব্যাখ্যা: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভেবেছিল প্রতিবাদ
করার বা মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস বা শক্তি কোনটাই বাঙালি জাতির নেই। কিন্তু বাঙালিরা
তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। তারা প্রতিবাদ করেছে, বুকে সাহস নিয়ে সমস্ত শক্তি
নিয়ে তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মহা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে
ব্যাখ্যা: ভাষার জন্য বাঙ্গালির আত্মত্যাগের কথা কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এই চরণে। ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা আমাদেরকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে, স্বাধীনতার পথ। কবি এই চরণে ভাষাপ্রেমী বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার পথে আগুয়ান হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
উদ্বাস্তু আশ্রয়হীন …. পোড়াগ্রাম … মাতৃ অপমানে
ব্যাখ্যা: বাঙালিরা শত্রুদের অসুর নৃত্যে আশ্রয়হীন,
উদ্বাস্তু হয়েছে। অর্থাৎ ঘরছাড়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া গ্রামে প্রিয়জনদের হারিয়েছে,
মা-বোনদের হত্যা-নির্যাতনের করুণ দৃশ্য দেখেছে।
কার রক্ত ছুঁয়ে শেষে হয়ে গেল ঘৃণার কার্তুজ।
ব্যাখ্যা: পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয়তায় প্রাণ হারায়
এদেশের লাখো মানুষ। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার মাঠ-পথ-ঘাট। তাদের আত্মত্যাগের
এই মহিমা প্রতিটি বাঙ্গালির হৃদয়ে জন্ম দিয়েছে প্রতিশোধের আগুন। সেই প্রতিশোধের দারুণ
ক্রোধে বাঙালি শক্ত হাতে দমন করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে।
রানার কবিতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এখানে
সাহসী জননী বাংলা, বুকে চাপা মৃতের আগুন
রাত জাগে পাহারায় … বুড়িগঙ্গা পদ্মা নদীতীর
ডাকাত পড়েছে গ্রামে, মধ্যরাতে হানাদার আসে
ব্যাখ্যা: এই বাংলা বাঙালির কাছে মায়ের মতো। অত্যন্ত
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার। পাকিস্তানী বর্বর হানাদাররা পদ্মা-বুড়িগঙ্গার তীরে এসে দস্যুর
মতো এদেশে হানা দিয়েছিল। বাঙালিরা তার প্রতিবাদ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
বাঙ্গালীরা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে স্বাধীন,
সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
ভাই বোন কে ঘুমায় ? জাগে, নীলকমলেরা জাগে।
ব্যাখ্যা: নীলকমল বলতে কবি এইখানে রূপকথার রাজকুমার
বুঝিয়েছেন। কবি রূপকথার রাজকুমারদের সাথে মুক্তিকামী স্বাধীনতা প্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের
তুলনা করেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে রুখতে মুক্তিযোদ্ধারা অসংখ্য নির্ঘুম রাত
কাটিয়েছেন। সমগ্র বাংলার জাগরণ আর নীল কমলরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের জাগরণকে কবি একীভূত করেছেন
পরম মহিমায়।
গ্রেনেড উঠেছে হাতে… কবিতার হাতে রাইফেল
ব্যাখ্যা: মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের আপামর জনগণ হাতে
অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কবিরা তাদের কবিতার চরণকে ব্যবহার করেছেন
যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে। তাঁরা কবিতার মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিকে স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছেন।
তাঁদের কবিতার মুক্তি ও প্রতিরোধের বাণী আমাদের স্বাধীনতার পথে সাহস, শক্তি ও প্রেরণা
জুগিয়েছে।
তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা কবিতার ব্যাখ্যা এই লিঙ্কে
এবার বাঘের থাবা, ভোজ হবে আজ প্রতিশোধে
যার সঙ্গে যে রকম, সেরকম খেলবে বাঙালি
খেলেছি, মেরেছি সুখে… কান কেটে দিয়েছি তোদের।
ব্যাখ্যা: বাঙালি জাতি দৃঢ় হাতে দমন করেছে পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনীকে। পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয়তার প্রতিশোধ স্পৃহা আমাদের স্বাধীনতা
যুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছে। তাদের ধ্বংসলীলার প্রতিশোধ স্বরূপ আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত
স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। পাক হানাদার বাহিনী বিনাশ বাঙালি জাতির জন্য এক সুখকর অনুভূতি
কারণ তাদের নারকীয়তার কোনও ক্ষমা নেই। তাদের অহঙ্কারকে ধূলিসাৎ করেছে স্বাধীনতাকামী
বাঙালি জাতির দৃঢ়তা ও প্রবল আত্মবিশ্বাস ।
এসেছি আবার ফিরে … রাতজাগা নির্বাসন শেষে
এসেছি জননী বঙ্গে স্বাধীনতা উড়িয়ে উড়িয়ে…
ব্যাখ্যা: বাঙালি জাতি দৃঢ় হাতে দমন করেছে পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনীকে। পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয়তার প্রতিশোধ স্পৃহা আমাদের স্বাধীনতা
যুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছে। তাদের ধ্বংসলীলার প্রতিশোধ স্বরূপ আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত
স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। পাক হানাদার বাহিনী বিনাশ বাঙালি জাতির জন্য এক সুখকর অনুভূতি
কারণ তাদের নারকীয়তার কোনও ক্ষমা নেই। তাদের অহঙ্কারকে ধূলিসাৎ করেছে স্বাধীনতাকামী
বাঙালি জাতির দৃঢ়তা ও প্রবল আত্মবিশ্বাস ।
মানুষ কবিতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দেখুন