২. তাঁর পিতা সৈয়দ আব্দুল বারী বি.এল. ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিলভি গ্রামের বাসিন্দা। মায়ের নাম সাবেরা বেগম।
৩. মাত্র ১১ বছর বয়সে জ্ঞাতি ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়।
৪. তিনি কলকাতা করপরোশনের অধীনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
৫. ১৯৩৯ সালে চট্টগ্রামের জনাব কামালউদ্দিন এমএস সির সঙ্গে তিনি পুনারয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
৬. তাঁর প্রথম রচিত গ্রন্থ- কেয়ার কাটা(১৯৩৭, গল্পগ্রন্থ)।
৭. তিনি বাংলা একাডেমি, একুশে পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক লাভ করেন।
৮. তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।
৯. সাহিত্য সাধনা ও নারী আন্দোলনে ব্রতী হয়ে তিনি শুধু কবি হিসেবেই বরণীয় হননি, জননী সম্ভাষণে ভূষিত হয়েছেন।
১০. সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালে ২০ নভেম্বর ঢকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১. তাহারেই পড়ে মনে সংলাপ নির্ভর কবিতা।
২. ১ টি ঋতুর নাম নাম আছে- বসন্ত।
৩. ২টি বাংলা মাসের নাম আছে- মাঘ, ফাল্গুন।
৪. বসন্ত আছে ৪ বার, ফাল্গুন আছে ৩ বার।
৫. লাইন ৩০ টি, স্তবক ৫টি।
৬. তাহারেই পড়ে মনে- বসন্তের আগমনে কবির অন্তরে বিদায়ী শীতের কথা জেগে ওঠে।
৭. তিনি বাংলা একাডেমি, একুশে পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক লাভ করেন।
সাহিত্যকর্ম:
কাব্যগ্রন্থ |
সাঁঝের মায়া(১৯৩৮), মায়া কাজল (১৯৯১),
উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪), মন ও জীবন (১৯৫৭), মৃত্তিকার ঘ্রাণ, অভিযাত্রিক (১৯৬৯)। |
গল্পগ্রন্থ |
কেয়ার কাঁটা |
আত্মজীবনী |
একালে আমাদের কাল (১৯৮৮) |
স্মৃতিকথা |
একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯) |
শিশুতোষ |
ইতল বিতল (১৯৬৫) ও নওল কিশোরের দরবারে
(১৯৮২) |
ছন্দ: কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। ৮ ও ১০ মাত্রার পর্ব। স্তবক বিন্যাসে কিছুটা বৈচিত্র্য আছে।
কবিতার গদ্যরূপ:
হে কবি ফাগুন ধরার বুকে নেমে এসেছে নীরব কেন। তমি কি
বসন্তকে বন্দনা গানসহ বরণ করে নিবে না? কবি সি তলে বলল দক্ষিণ দুয়ার কি খুলে
গেছে। বাতাবী লেবুর ফুল ফুটেছে কি। ফুটেছে আমের মুকল। দক্ষিণ সমীর গন্ধে গন্ধে
আকুল হয়েছে কিনা তা কবি জানতে চান।
কবি তুমি কি এসব এখনো দেখনি। তুমি উন্মনা কেন আজ। তোমার
পুষ্প সাজ কোথায়। সে সুদূরে চাহিয়া কহিল তার তরী কি অলখের পাথার বেয়ে এসেছে। আগমনী
গান কি বেজে উঠেছে। সেকি আমারে ডেকেছে। আমি তো কিছুই শুনিনি সন্ধানও রাখিনি।
আমি বললাম, হে কবি, আজ গীত রচনা কর। তোমার কণ্ঠে বসন্ত বন্দনা গীতি আমি শুনি- তোমার কাছে এ আমার মিনতি। সে মৃদুস্বরে বলল নাই হল এবার বসন্তের গান, আমি রচনা নাই করলাম, বসন্তকে বরণ করে আনার জন্য। কিন্তু তবু বসন্ত এসেছে সে ভুলেনি। ফাগুন স্মরণে সে এসেছে। আমি বললাম, হে কবি তুমি কি সেজন্য অভিমান করেছ। বসন্ত এসেছে ঠিকই। কিন্তু তুমি তাকে বৃথা করে দিলে। তখন সে পরম হেলায় বলল, বৃথা কেন হবে, শাখায় শাখায় ফাগুন বেলায় ফুল কি ফুটেনি, ঋতুরাজ বসন্ত পুষ্পের আরতি কি লাভ করেনি, মাধবী ফুলের বুকে গন্ধ কি নেই। এসব মিলে কি অর্ঘ্য নিবেদন। করেনি। আমি বললাম, সবই হয়েছে কিন্তু বসন্তের প্রতি তোমার এই বিমুখতা কেন। তুমি ঋতু রাজকে উপেক্ষা করে ব্যথা দাও কেন। কাছে সরে এসে সে বলল মাঘের সন্ন্যাসী রিক্তহস্তে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে কোহেলী উত্তরী তলে ধীরে চলে গেছে। তাকে আমি কোন মতেই ভুলতে পারি না। তারেই মনে পড়ে।
লালসালু উপন্যাসের চরিত্র বিশ্লেষণ এখানে
কবিতার নামকরণ :
'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতাটি কবির বেদনা বিধূর হৃদয়ের প্রকাশে উজ্জ্বল। এই কবিতার নামকরণটি কিছুটা অস্পষ্ট। কবির কাকে মনে পড়ে সে কথার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে এ কথা বুঝতে কষ্ট হয় না কবির অত্যন্ত প্রিয়জনের বেদনা বিধুর স্মৃতি স্মরণেই কবিতাটি রচিত। কবির প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তার মনে যে বেদনা জাগে সে বেদনারই অনুরণন কবিতাটিতে শুনতে পাওয়া যায়। বসন্তকাল মানুষের জীবনে আনন্দের শিহরণ নিয়ে আসে। বিশেষ করে কবিপ্রাণে এ সময়ে আনন্দের দোলা লাগে। কিন্তু যে প্রাণ বিরহ কাতর, শূন্যতার হাহাকার যার হৃদয়কে মরুসদশ করে রেখেছে, সেখানে বাইরের প্রকৃতি কোন আনন্দের বীজ বপন করতে পারে না। কবি বিষন্ন। তার চোখের সামনে আশার আলো জ্বলে না। ফুলের সুবাস, কোকিলের তান তাকে। আকুল করে না। প্রকৃতির সাথে মানব মনের নিগূঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। সে সম্পর্ক তখনই মধুর। যখন প্রাণে থাকে খুশির আমেজ। কিন্তু প্রাণে যদি বেদনা থাকে, দুঃখ থাকে, তাহলে ফুল, পাখি, পাপিয়া সে দুঃখ মুছাতে পারে না। কবির জীবনেও সেই দুঃখেরই সুগভীর ছায়া। সেখানে বসন্তের শিহরণ নেই, কাব্যচর্চার আনন্দমুখরতা নেই। সবকিছু ছাপিয়ে শুধু তাঁর অতীত দিনের স্মৃতিই মনে পড়ছে। যে স্মৃতি ছিল মধুর প্রাণময় আজ তা ধূসর। তাই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন হলেও কবির অনুভূতি নীরব দুঃখভারে প্রপ্রীড়িত। ক্ষণে ক্ষণে শুধু অতীতকেই তিনি মনে করেছেন। যে তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণভাবে রিক্ত করে দিগন্তের পথে পাড়ি জমিয়েছেন, সেই নিরুদ্দেশ যাত্রীর জন্যে তাঁর মন বারবারই অশ্রুসিক্ত হয়েছে এবং তাকে মনে পড়েছে। এই মনে পড়াকেই তিনি তাঁর ‘তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর এই কবিতায় অতীত জীবনের দুঃখের স্মৃতিই সজীবতা লাভ করেছে। বসন্ত সেখানে কোন শিহরণ জাগাতে পারেনি; তাই, কবিতাটির নামকরণ 'তাহারেই পড়ে মনে' যথার্থই সার্থক এবং সাফল্য মণ্ডিত।
অপরিচিতা গল্পের বিষয়বস্তু এই লিঙ্কে
কবিতার মূলভাব
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি
কবির বেদনা বিধূর হৃদয়ের প্রকাশে উজ্জ্বল। কবিতাটি ১৯৩৫ সালে ‘মাসিক মোহাম্মাদী’পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে কবিতাটি ‘সাঁঝের মায়া’কাব্য গ্রন্থে সংকলিত হয়। এই কবিতার নাম করণটি কিছুটা অস্পষ্ট।
কবির কাকে মনে পড়ে সে কথার উল্লেখ নাই। তবে একথা বুঝতে কষ্ট হয় না কবির অত্যন্ত প্রিয়জনের
বেদনা বিধূর স্মৃতির স্মরণেই কবিতাটি রচিত।
শীতের
শেষে বসন্ত এসেছে নব ফুল সাজে। ধরণী আনন্দে উদ্বেলিত। কিন্তু কবির জীবন আজ রিক্ততার
হাহাকার। বেদনা বিধূর কবি চিত্তে বসন্ত দোলা দেয় নি। কবি শীত ঋতুর বেদনার্ত তিরোধানের
স্মৃতি বুকে ধরে রেখেছেন। বসন্তেরর আগমন তিনিই টেরই পান নি। তাই বসন্ত বরণের কবিতা
তিনি রচনা করেন নি। কাব্য পাঠক কবির কাছ থেকে বসন্ত বরণের কবিতা শুনতে আগ্রহী কিন্তু
কবি চিত্তে হারানোর ব্যাথা এতই প্রবল যে, বর্তমানের মধুময় দিনও তাকে আনন্দ দিতে পারছেন।
কবি বিরহী, তাঁর সে বিরহ শীতের রিক্ততায় ও কাঠিন্যে ভরপুর। পুষ্পশূণ্য শীত ঋতুতে হৃদয়কে
শূণ্য করে যে পথিক দিগন্ত পথে উধাও হয়ে গেছে তারই জন্য কবির আকুলতা। কবির জীবনে সৌভাগ্য
আসার আগেই প্রিয়জন রিক্ততার হাহাকার বুকে নিয়ে অনির্দেশ্য অনন্তলোকে চলে গিয়েছে। সে
স্মৃতি, যে বেদনা কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্তের মধুময় দিন কবির কাছে আবেদনহীন।
কবির আবেদনহীন এই প্রচ- শূণ্যতাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ‘তাহারেই মনে পড়ে’ কবিতায়। তাই বসন্ত উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ
বিদায়ের সুর নিনাদিতল হচ্ছে।
মাসি-পিসি গল্পের বিষয়বস্তু লিঙ্ক