ভাবসম্প্রসারণ; গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হতে ধন।


“গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হতে ধন।
নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।” 

মূলভাব: গ্রন্থের ভাণ্ডারে সঞ্চিত আছে যে জ্ঞান, তা যদি গ্রন্থেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা মূল্যহীন। অন্যের কাছে টাকা আছে জেনে স্বীয় কাজ সমাধা করার জন্য নিশ্চিন্তে বসে থাকা যেমন ঠিক নয়, তেমনি গ্রন্থগত বিদ্যাকে বাস্তবে প্রয়োগ না করাটাও মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়।  

সম্প্রসারিত ভাব: গ্রন্থ পাঠ করে মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করতে পারে। জ্ঞানের ধারক ও বাহক হচ্ছে বই। গ্রন্থ জ্ঞানের ভাণ্ডার। কিন্তু তাতে কোন উপকার নেই, যতক্ষণ না পাঠের দ্বারা সে জ্ঞানি ব্যক্তির অর্জনে পরিণত হচ্ছে। অনুরূপ নিজের ধন অপরের কাছে রেখে নিজের মনে করা, এটাও বোকামির পরিচয়। কেননা প্রয়োজনের সময় সে ধন কোন কাজে আসে না। গ্রন্থকে সুসজ্জিত তাকে রেখে অনেকেই। নিজেকে মহাজ্ঞানী ভাবেন। কিন্তু এটা যে কতটুকু মূর্খের পরিচয় তা তিনি জানেন না। অনেক ছাত্র কেবলমাত্র । পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য না বুঝেই গ্রন্থগত বিদ্যা তোতা পাখির মতো মুখস্থ করে। এতে তার পরীক্ষায় । পাস জোটে কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান আহরণ হয় না। তাই বিদ্যাকে গ্রন্থের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে তার । প্রয়োগ ঘটানো প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থে, যে ব্যক্তি হৃদয় দিয়ে জ্ঞান আহরণ করে এবং তা অন্যকে বুঝাবার। ক্ষমতা রাখে সে-ই যথার্থ শিক্ষিত। বিদ্যার গুণেই একজন শিক্ষিত ব্যক্তি আদর্শবান, সংযমী ও আত্মনির্ভরশীল। হয়ে গড়ে উঠে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী তাই বলেছেন—‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।’

মন্তব্য: বিদ্যা ও ধন উভয়কেই উপার্জন করতে হলে সাধনার প্রয়োজন। বিদ্যা গ্রন্থাশ্রায়ী আর ধন পরিশ্রম-লব্ধ, প্রয়োজনের তাগিদে সীমাবদ্ধ। গ্রন্থগত বিদ্যাকে অধিকার করতে না পারলে যেমন কোনো লাভ নেই, তেমনি অপরের হাতে টাকা আছে জেনে কোনো কাজে হাত দেওয়াও ঠিক নয়। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন