মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
লেখক পরিচিতি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পিতৃ প্রদত্ত নাম : প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডাক নাম : মানিক।
জন্ম পরিচয়
জন্ম তারিখ : ১৯০৮ সালের ১৯ মে।
জন্মস্থান : বিহারের সাঁওতাল পরগণার দুমকা।
পৈতৃক বাড়ি : ঢাকার বিক্রমপুরে।
পিতার নাম : হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাতার নাম : নীরদাসুন্দরী দেবী।
সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস : জননী, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মানদীর মাঝি, পুতুল নাচের ইতিকথা,
চিহ্ন, মাঝির ছেলে (কিশোর উপন্যাস)
গ্রল্পগ্রন্থ : প্রাগৈতিহাসিক,
সরীসৃপ, সমুদ্রের স্বাদ, কুষ্টরোগীর বৌ, টিকটিকি, হলুদ পোড়া, আজ কাল পরশুর গল্প, হারানের
নাতজামাই, ছোট বকুলপুরের যাত্রী।
জীবনাবসান : ৩
রা ডিসেম্বর, ১৯৫৬ কলকাতা।
এক নজরে মাসি পিসি গল্পের খুঁটিনাটি
১. শেষবেলায় খালে থাকে- পুরো ভাটা।
২. পুলটি ছিল- কংক্রিটের।
৩. খালের ধারে লাগানো সালতিটি কোথায় ছিল- কংক্রিটের পুলের কাছে।
৪. সালতি থেকে পাড়ে তোলা হচ্ছে- খড়।
৫. দুটো বড় সালতির বোঝাই আঁটি বাঁধা খড় তিনজনের মাথায় চড়ে জমা হচ্ছে
কোথায়- ওপরের মস্ত গাদায়।
৬. সালতি থেকে ওদের মাথায় খড় তুলে দিচ্ছে- দুজন।
৭. আট সাঁট থমথমে গড়ন, গোলগাল মুখ- আহ্লাদির।
৮. সরু লম্বা সালতিটির লগি ঠেলেছে- দুজন প্রোঢ়া বিধবা।
৯. মাঝখানে গুটি সুটি হয়ে বসে আছে- অল্প বয়সী একটি বউ (আহ্লাদি)।
১০. অল্প বয়সী বউটির গায়ে ছিল- নকশা পাড়ের সস্তা সাদা শাড়ি।
১১. আঁট সাঁট থমথমে গড়ন, গোলগাল মুখ- আহ্লাদির।
১২. ‘মাসি-পিসি ফিরছে কৈলেশে।’ উক্তিটি- বুড়ো লোকটির (রহমানের)।
১৩. “ও মাসি, ওগো পিসি, রাখো রাখো। খপর আছে শুনে যাও।” উক্তিটি- কৈলেশের।
১৪. “বেলা আর নেই কৈলেশে। উক্তিটি- মাসি বলে বিরক্তির সঙ্গে।
১৫. “অনেকটা পথ যেতে হবে কৈলেশ”। উক্তিটি- পিসির।
১৬. কার গলার আওয়াজ ঝরঝরে, একটু মোটা, একটু ঝংকার আছে- মাসি পিসির।
১৭. কৈলেশের সাথে দেখা হয়েছিল- জগুর।
১৮. জগু হলো- আহ্লাদির স্বামী।
১৯. কৈলাশ ফাঁপরে পড়ে আড় চোখে তাকায়- আহ্লাদির দিকে।
২০. “ছাগলটা বেচে দিয়ে খাওয়াইনি ভালোমন্দ দশটা জিনিস”। উক্তিটি- পিসির।
২১. “বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাইতো”। উক্তিটি- মাসির।
২২. শ্বশুড়বাড়িতে কে মরেছে অল্পদিন আগে- বুড়ো রহমানের মেয়েটা।
২৩. কৈলাশের কথার ভিত্তিতে আহ্লাদি একটা শব্দ করে- অস্ফুট আর্তনাদের মতো।
২৪. শকুনরা উড়ে এসে বসেছে কোথায়- পাতাশুন্য শুকনো গাছটায়।
২৫. দুর্ভিক্ষ কোনোমতে ঠেকিয়েছিল কে- আহ্লাদির বাপ।
২৬. সে (আহ্লাদির বাবা), তার বউ আর ছেলেটা শেষ হয়ে গেল কীভাবে- মহামারীর
রোগে, কলেরায়।
২৭. বছরের পর বছর ধরে কী পুঁজি হয়েছিল দুজনের- রূপোর টাকা আধুলি সিকি।
২৮. “একটা কাজ করবি বেয়াইন”।- মাসি বলল পিসিকে।
২৯. তরি তরকারি ফলমূলের দাম চড়া কোথায়- শহরের বাজারে।
৩০. নগদ পয়সার জন্য বাগানের জিনিস বেচতে দেয় কারা- গাঁয়ের বাবু বাসিন্দারা।
৩১. উড়ে এসে জুড়ে বসেছে- মাসি।
৩২. আহ্লাদিকে বাঁচাতে হবে- শ্বশুর ঘরের কবল থেকে।
৩৩. আহ্লাদিকে সামলে রাখতে হবে- গায়ের বজ্জাত লোকদের নজর থেকে।
৩৪. জগুর বউ নেবার আগ্রহ- খুবই স্পষ্ট।
৩৫. “ডরাস্নি আহ্লাদি” উক্তিটি- মাসির।
৩৬. ডরাস্নি ডর কিসের। উক্তিটি- পিসির
৩৭. ছ্যাঁড়রা, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে- আহ্লাদির নিজেকে।
৩৮. মাসি-পিসিকে পাগল করে তুলেছে- গোকুল।
৩৯. উপদেশ দিতে গেলে চটবে- জামাই।
৪০. বাইরের থেকে হাঁক আসে- কানাই চৌকিদারের।
৪১. মাসি-পিসি উপোস করেছে- শুল্কপক্ষের একাদশীর।
৪২. “কাছারি বাড়ি যেতে হবে একবার”। উক্তিটি- কানাইয়ের।
৪৩. ‘মরণ নেই?’ উক্তিটি- পিসির।
৪৪. গাঁয়ের গুন্ডা হলো- সাধু বৈদ্য ওসমানেরা।
৪৫. ফেটি বাধা বাবরি চুলওয়ালা মাথা- বৈদ্যের।
৪৬. কানাই আর পেয়াদা কনেস্টেবলের সঙ্গে কাছারি বাড়িতে যাবে- মাসি-পিসি।
৪৭. মাসি নিয়ে আসে- বঁটি।
৪৮. পিসির হাতে দেখা যায়- রামদার মতো মস্ত একটা কাটারি।
৪৯. “বটে? ধরে বেঁধে টেনেগিচড়ে নিয়ে যাবে?” উক্তিটি- মাসি বটিটা বাগিয়ে ধরে
দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে।
৫০. কানাই আর পেয়াদা কনেস্টেবলের সঙ্গে কাছারি বাড়িতে যাবে- মাসি-পিসি।
৫১. “আয় না বজ্জাত হারামজাদা, এগিয়ে আয় না?” উক্তিটি- পিসির।
৫২. দলবল নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়- কানাই।
৫৩. মাসি-পিসি হাঁকডাক শুরু করেছিল- খানিকটা কানাইদের ভড়কে দেবার জন্য।
৫৪. আহ্লাদির বাপের আমলের গোরুটা নেই- গামলাটা আছে।
৫৫. মাসি-পিসি তৈরি হয়ে থাকে- যুদ্ধের আয়োজন করে।
মাসি পিসি গল্পের কাহিনী সংক্ষেপ ও বিষয়বস্তু
‘মাসিপিসি' গল্পটি স্বতন্ত্র। মায়ের বোন মাসি আর বাপের বোন পিসি ছাড়া বাপের ঘরের কেউ নেই আহ্লাদীর। দুর্ভিক্ষকে তার বাপ কোনমতে ঠেকাতে পারলেও মহামারীর প্রকোপে তার মা-বাপ-ভাই সবাই মারা গেল। নিরাশ্রয় দুই বিধবা মাসি-পিসীর কাছে আহ্লাদী থাকে। বাঁচার তাগিদেও উপায়ান্তর না দেখে মাসি-পিসি শহরের বাজারে শাক-সব্জী ফলমূল নিয়ে বেচে আসে।
মাসি-পিসির দুজনেরই অবস্থা এক, বয়স সমান, একঘরে বাস। আগে ওদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা দ্বেষ কোন্দল যথেষ্ট ছিল। কিন্তু শাকসব্জী বেচে বাঁচবার চেষ্টায় একসঙ্গে কোমর বেঁধে নেমে পড়ামাত্র দুজনের হয়ে গেল একমন একপ্রাণ। আহ্লাদীকে কেন্দ্র করেই ওদের এখন সব। আহ্লাদীর বিবাহ হয়েছে কিন্তু স্বামীটা মাতাল অপদার্থ। শুঁড়িখানায় বারোমাস পড়ে থাকে। তাই আহ্লাদীর জন্য মাসি-পিসীর চিন্তার শেষ নেই।
খালি ঘরে আহ্লাদীকে রেখে ওরা কোথায়ও যায় না। দুজনে মিলে কোথাও যেতে হলে আহ্লাদীকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আহ্লাদীকে নিয়ে তাদের সমস্যা কম নয়। তার দিকে গ্রামের অনেকেরই নজর পড়েছে। এক রাত্রে চৌকিদার পুলিশ নিয়ে ওদের বাড়ি এসে হাজির। দারোগাবাবু এসেছে। একবার দুজনকেই যেতে হবে কাছারিবাড়ি।
মাসি পিসী গরীব হলেও বোকা নয়। তারা বুঝতে পারে, এদের সঙ্গে আরও তিন চারজন গুণ্ডা এসেছে। চৌকিদার কনস্টেবলের সঙ্গে ওরা বেরিয়ে গেল ওই গুণ্ডারা এসে নিয়ে যাবে আহ্লাদীকে। কাপড় ছাড়া আর হাত ধোয়ার নাম করে মাসি পিসী ঘরে এসে বঁটি আর কাটারি নিয়ে ওদের তাড়া করে। ওরা বলে, “তোমাদের সাথে মোরা মেয়েলোক পারব না জানি, কিন্তু দুটো একটাকে মারব জখম করব ঠিক।” ওরা সাহস করে হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। বহু লোক এসে জড় হয়।ভয়ে চৌকিদার-কনস্টেবল-গুণ্ডারা পালিয়ে যায়। মাসি-পিসী জানে ওরা ফের আসতে পারে। তাই যুদ্ধের জন্য ওরাও তৈরি হয়ে থাকে।
“মেয়েটাকে কুটুমবাড়ি সরিয়ে ফেলায় সোনাদের ঘরে মাঝরাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল সেবার।” তাই আগুন ধরালে তা নেবানোর জন্য ওরা কাঁথা ভিজিয়ে রাখে। হাতের কাছে বঁটি আর দা। ঘড়ায় আর কলসীতে জল এনে রাখে। আত্মরক্ষার জন্য তারা প্রস্তুত হয়ে থাকে। পড়ে পড়ে মার খাওয়া নয়, প্রয়োজনে প্রতিরোধ করতে হবে। গরীব বলে, স্ত্রীলোক বলে তারা দুর্বল নয়। অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে চাই সাহস, বুদ্ধি আর সংহতি।
মাসি-পিসি একটি সাহসিকতার গল্প, প্রতিরোধের
গল্প, আত্মনির্ভরশীলতার গল্প, জনজাগরণের গল্প। সেজন্য এই গল্পটি
বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
হাসপাতালের ডাক্তার পর্যন্ত কৈলাসের কথা শুনে ভৈরবকে সত্য সার্টিফিকেট দিলেন না। তখন কৈলাসের অত্যাচারের প্রতিশোধ ভৈরবের সহযোগী রাম শ্যামেরা নিজেরাই নিল। কৈলাসকে তারা মেরে উপযুক্ত শাস্তি দেয় (পেটব্যথা)। হাসপাতালে পেটব্যথা বলেই ভর্তি করায়। প্রতিবাদের মধ্যেও গল্পটি শ্লেষাত্মক হওয়ায় এর আবেদন সরস হয়েছে।
অপরিচিতা গল্পের বিষয়বস্তু এখানে
মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর।
বন্যায় ভাসিয়ে নিয়েছে ফুলবানুর সর্বস্ব। ভয়ংকর আইলার তাণ্ডবে সংসার সন্তান, পোষা কুকুর, হাঁস-মুরগি, ঘরবাড়ি সবকিছুই নিরুদ্দেশ। বাঁধের উপর বসে সে এখন জীবনসমুদ্রে হাবুডুবু খায়। এই বৃদ্ধার আপন বলতে আছে এক নাতনি। স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধী নাতনিটি হয়তো যমের মুখ থেকে বাঁচিয়েছে তাকে। সামনে বন্যার পানিতে ছোট মাছের একটা ঝাঁক দেখে বৃদ্ধার চোখ যৌবনের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । নাতনির হাত ধরে শুরু হয় মাছধরা। তেল-নুন-চাল জোগাড়ের আয়োজন। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, হিংসা-দ্বেষ, কলহ-বিবাদ, অপারগতা-অবজ্ঞার ভিতর দিয়েই নানি-নাতনির এই বন্ধন। নাতনির নিরাপত্তা, সুখ-দুঃখ, সমস্যা, ভবিষ্যৎ নিয়েই ঘরকন্না ফুলবানুর।
খ. মাসি-পিসি আহ্লাদিকে জগুর কাছে পাঠাতে চায়নি কেন?
গ. উদ্দীপকে 'মাসি-পিসি' গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সমাজের অসহায় নারীর করুণ সংগ্রামী জীবনকাহিনি উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি' গল্পের প্রধান উপজীব্য”- উক্তিটি মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. সালতি হলো শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু ডোঙা
বা নৌকা।
খ. আহ্লাদির ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করত বলে
মাসি-পিসি আহ্লাদিকে জগুর কাছে পাঠাতে চায় না।
আহ্লাদির স্বামী জগু আহ্লাদির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাত। ঠিকমতো খেতে-পরতে দিত না। উপরন্তু খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেদম মারধর করত। কলকে পোড়া ছ্যাঁকা দিত। তাই মাসি-পিসি তাদের আদরের আহ্লাদিকে জগুর কাছে পাঠাতে চায়নি।
গ. উদ্দীপকে 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির মার্সি-পিসির জীবনের সংগ্রামী দিকটি ফুটে উঠেছে।
মানুষ মানুষকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকে। সেই প্রাণের দোসর মানুষ যদি শিকার হয় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানুষরূপী আসুরিক কোনো হত্যাযজ্ঞের, তখন মানুষ তার আশ্রয় হারায়।
উদ্দীপকের ফুলবানুর বাড়িঘর সবকিছুই ভয়াল বন্যায় ভাসিয়ে নিয়েছে। ভয়ংকর আইলার তাণ্ডবে সংসার, সন্তান, পোষা কুকুর, হাঁস-মুরগি, ঘরবাড়ি সবকিছুই নিরুদ্দেশ। বাঁধের উপর বসে সে এখন জীবন সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফুলবানুর আপন বলতে আছে এক নাতনি। স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধী নাতনিটি হয়তো যমের মুখ থেকে বাঁচিয়েছে তাকে। সামনে বন্যার পানিতে ছোট মাছের একটা ঝাঁক দেখে বৃদ্ধার চোখ যৌবনের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নাতনির হাত ধরে শুরু হয় মাছ ধরা। শুরু হয় তেল-নুন-চাল জোগাড়ের আয়োজন । ক্ষুধা-তৃষ্ণা, হিংসা-দ্বেষ, কলহ-বিবাদ, অপারগতা অবজ্ঞার ভেতর দিয়েই নানি-নাতনির এই বন্ধন । নাতনির নিরাপত্তা, সুখ-দুঃখ, সমস্যা, ভবিষ্যৎ ফুলবানুর ঘরকন্না। অন্যদিকে ‘মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির মাসি-পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন আহ্লাদি। আহ্লাদিকে নিয়েই বিধবা মাসি-পিসির সংসার। অত্যাচারী স্বামী এবং লালসা উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুণ্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক যুদ্ধ খুবই প্রশংসনীয়। জীবনধারণের জন্য নারী হয়ে নৌকা চালনা ও সবজির ব্যবসায় করে সংসার চালায় দুই বিধবা। ফুলবানু আর দুই বিধবার জীবন খুবই বেদনার। তাই উদ্দীপকে ‘মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির মাসি-পিসির জীবনের সংগ্রামী দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ সমাজের অসহায় নারীর করুণ সংগ্রামী জীবনকাহিনি
উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি' গল্পের প্রধান উপজীব্য- উক্তিটি যথার্থ।
নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা অনেক কষ্টে জীবনধারণ
করে। বিশেষ করে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বসবাস করে। তাদের মধ্যে
নিম্নবিত্তের নারীরা চরম বৈষম্যের শিকার। কিছু লোভী, স্বার্থান্ধ নরপশু সেসব
অসহায় মানুষকে ক্ষতি করার অপপ্রয়াস চালায়। ফলে 'মাসি-পিসি' গল্পের মূল
বিষয়বস্তু হলো স্বামীর নির্মম নির্যাতনের তারা একধরনের নিরাপত্তাহীনতায়
প্রতিনিয়ত ভুগতে থাকে। শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ কাহিনি। আহ্লাদি নামের
ওই তরুণীর মাসি-পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। আহ্লাদিকে নিয়েই তাদের সংসার।
আহ্লাদির স্বামী জগু আহ্লাদির ওপর অমানুষিক নির্যাতন। ঠিকমতো খেতে দিত না, পরতে
দিত না। বেদম মারধর করত, কলকেপোড়া ছ্যাকা দিত বলে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে জগুর কাছে
যেতে দেয় না। অন্যদিকে লালসা উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুণ্ডা-বদমাশদের আক্রমণ
থেকে বারবার আহ্লাদিকে রক্ষা করত মাসি-পিসি। এই দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধ
খুবই প্রশংসনীয়। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবন নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম,
নারী হয়ে চালাত। পোষা নৌকা চালনা ও সবজির ব্যবসায় করা প্রভৃতি এ গল্পের
বৈচিত্র্যময় দিক। অন্যদিকে উদ্দীপকে বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ফুলবানুর
সর্বস্ব। ভয়ংকর আইলার তাণ্ডবে ফুলবানুর সংসার, সন্তান, কুকুর, হাঁস-মুরগি,
ঘর-বাড়ি সবই নিরুদ্দেশ। ফুলবানু বাঁধের উপর বসে জীবনসমুদ্রে হাবুডুবু খায়।
ফুলবানুর আপন বলতে এক নাতনি আছে। স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধী নাতনি নিয়ে
ফুলবানু বেঁচে আছে। বন্যার পানিতে সামনে ছোট মাছের একটা ঝাঁক দেখে বৃদ্ধার চোখ
যৌবনের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নাতনির হাত ধরে শুরু হয়। মাছ ধরা। চলে তেল-নুন, চাল
জোগাড়ের আয়োজন। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, হিংসা-দ্বেষ, কলহ-বিবাদ, অপারগতা, অবজ্ঞার ভেতর
দিয়েই নানি- নাতনির এই বন্ধন। নাতনির নিরাপত্তা, সুখ-দুঃখ, সমস্যা, ভবিষ্যৎ
নিয়েই ঘরকন্না ফুলবানুর । মাসি-পিসি' গল্পে আহ্লাদিকে নিয়েই মাসি-পিসির জীবন।
সমাজের মুত্সার মানুষদের কত অত্যাচার, কত কষ্ট সহ্য করে মাসি-পিসি সংগ্রাম করে
যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। লক্ষ্য শুধু বেঁচে থাকা। তাদের সংগ্রামী চেতনাই পরিলক্ষিত
হয়েছে গল্পে। অন্যদিকে বন্যায় নিজের সর্বস্ব হারিয়েও ফুলবানু একমাত্র নাতনিকে
নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছে নিরন্তর। তাই প্রমাণিত হয় যে, প্রশ্নোক্ত
মন্তব্যটি যথার্থ।
২.
সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল নাকো, নারীরা আছিল দাসী।
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি।
খ. 'নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে'- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সাথে 'মাসি-পিসি' গল্পের চেতনাগত সাদৃশ্য তুলে ধর
ঘ. “উদ্দীপক ও 'মাসি-পিসি' গল্পে অধিকার আদায়ে নারীর সাহসী। ভূমিকার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।"- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
ক. ‘মাসি-পিসি' গল্পে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় তিন-চারজন ঘুপটি মেরে আছে।
খ. 'নিজেকে তার ছ্যাঁচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো
লাগে'- এবং আহ্লাদি তার
পরিস্থিতি সম্পর্কে ভেবেছে।
স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে আহ্লাদি বাবার বাড়ি তার হাসিপিসির কাছে আশ্রয় নেয়। এখানে আবার বদ লোকজনের কুনজর তার ওপর পড়ে। তরিতরকারি কিনতে আসা মানুষজন তাকে পণ্যের সমতুল্য মনে করে। গাঁয়ের কিছু লোকের এমন মনোভাব বুঝয়ে পেরে আহ্লাদির মন খারাপ হয়। তার মনে হয় তার কোনো সম্মান নেই, ইচ্ছা-অনিচ্ছা নেই, কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নেই। তাই নিজেকে তার ছ্যাঁচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো মনে হয়।
গ অধিকার আদায়ে নারীর সাহসী ভূমিকার দিক থেকে
উদ্দীপকের সাথে ‘মাসি-পিসি' গল্পের চেতনাগত সাদৃশ্য রয়েছে।
আমাদের সমাজে নারীরা বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে যে থাকে। তবে এই সময়ের নারীরা তাদের অধিকারের বিষয়ে অনেক সচেতন। তারা অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে।
‘মাসি-পিসি' গল্পে মাসি-পিসি সাহসী-সংগ্রামী নারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা অর্থ উপার্জনে নামে। বাইরে কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়। তবে তাতেও তারা দমে যায়নি। তারা তাদের জীবনসংগ্রাম চালিয়ে গেছে। উদ্দীপকের কবিতাংশেও নারীদের সাহসী-সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা আর বন্দি নয়। তারা আজ নিজেদের অধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। আজ নারীরা সাম্যের যুগে পদার্পণ করেছে। আজ অধিকার আদায়ে নারীরা সাহসী পুরুষের সমতুল্য। এই দিক থেকেই উদ্দীপকের সাথে 'মাসি-পিসি' গল্পের চেতনাগত সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ) “উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি' গল্পে অধিকার আদায়ে
নারীর সাহসী ভূমিকার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।"- মন্তব্যটি যথার্থ।
আমাদের সমাজব্যবস্থার কারণেই আজ নারী-পুরুষের
মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু উভয়েই সমান মর্যাদার অধিকারী। তবে বর্তমানে
নারীরা সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। এখন তারা অবলীলায়
পুরুষের মতো গুরুদায়িত্বও গ্রহণ করছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে নারীর সংগ্রামী ও সাহসী চেতনার বিষয়টি পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় আজ নারীরা প্রতিফলিত হয়েছে। দাসীরূপে গৃহকোণে আবদ্ধ নেই। তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতা দূর করে কাজে-কর্মে পুরুষের সমমর্যাদায় অবতীর্ণ হয়েছে। 'মাসি-পিসি' গল্পেও দেখা যায়, মাসি-পিসি বেঁচে থাকার জন্য নারী হয়েও পুরুষের মতো কাজ করেছে। নৌকা চালিয়ে, সবজি বিক্রি করে আয়-উপার্জনে নিয়োজিত থেকেছে। তারা সমগ্র নারী সমাজের সংগ্রামী জীবনের প্রতিনিধি। নিজেদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে মাসি-পিসির মাঝে সাহসিকতার পরিচয় প্রতিফলিত হয়েছে। ‘মাসি-পিসি' গল্পে লেখক মাসি-পিসির মধ্য দিয়ে সমগ্র নারী জাতিকে চার দেয়ালের ভেতর থেকে বাইরের জগতে এনেছেন। নারীর ত্যাগ ও সংগ্রামকে সবার সামনে তুলে ধরেছেন। নারীর প্রতি লেখকের এমন মনোভাব উদ্দীপকের কবিতাংশেও ফুটে উঠেছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি' গল্প উভয়ক্ষেত্রেই অধিকার আদায়ে নারীর সাহসী ভূমিকার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। তাই প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
নিজে চেষ্টা কর।
৩.
যারা দুর্বল, যারা সাধারণ, তাদেরকে নানা প্রকার
প্রতিকূলতা সহ্য করতে হয়। অন্যায়কারী দুর্বলকে খোঁজে অন্যায় করার লোভে। দুর্বল
হয়তো কখনো মাথা পেতে নেয়, সহ্য করে। কিন্তু দুর্বল যেদিন জেগে ওঠে, সেদিন অসীম
শক্তি ভর করে তাদের শরীরে।
খ. ‘মরণ ঠেকাতেই ফুরিয়ে আসছে তাদের জীবনীশক্তি।' উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে দুর্বল বলে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের সাথে‘মাসি-পিসি' গল্পের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. 'দুর্বল ক্ষেপে গেলে দুর্বার সাহসী হয়ে ওঠে।' উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি' গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
৪.
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রপথিক বেগম রোকেয়া নারীদের
স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যেকোনো ধরনের কাজে আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি
বলেছিলেন, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে যেকোনো কাজ, যেমন— লেডি কেরানি, ম্যাজিস্ট্রেট
পর্যন্ত নারীদের কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে। তিনি মনে করেন, নারী সমাজের অর্ধেক
অঙ্গ। তার মতে অকর্মণ্য পুতুল জীবনের জন্য নারীর জন্ম হয়নি।
খ. ‘মা-মাসির কাছেই রইতে হয় এ সময়টা'— ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি' গল্পের কোন দিক প্রকাশ করেছে তা নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপকের ‘অকর্মণ্য পুতুল জীবন’ বাদ দিয়ে নারী হয়ে উঠেছে কর্মকুশল— ‘মাসি-পিসি' গল্পের আলোকে উক্তিটির সত্যতা যাচাই কর।