তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে উত্তরপদ বা পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় এবং পূর্বপদে বিভিন্ন বিভক্তি লোপ পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদের যে বিভক্তি লুপ্ত হয়ে সমস্তপদ গঠিত হয়, সে বিভক্তির নামানুসারে তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ হয়।
তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ
বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসকে প্রধানত ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) দ্বিতীয়া তৎপুরুষ
(খ) তৃতীয় তৎপুরুষ
(গ) চতুর্থী তৎপুরুষ
(ঘ) পঞ্চমী তৎপুরুষ
(ঙ) ষষ্ঠী তৎপুরুষ
(চ) সপ্তমী তৎপুরুষ
এছাড়াও তৎপুরুষ সমাসের আরো কয়েকটি শাখা রয়েছে। যথা—অলুক তৎপুরুষ, নঞ তৎপুরুষ, উপপদ তৎপুরুষ ও সুপ্সুপা সমাস।
(ক) দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- গা-কে ঢাকা - গা-ঢাকা
- জলকে তোলা – জলতোলা
- ভাতকে রাঁধা - ভাতরাধা
- ফুলকে তোলা - ফুলতোলা
- বধূকে বরণ - বধূবরণ
- কলাকে বেচা - কলাবেচা,
- ছেলেকে ভুলানো - ছেলেভুলানো
- রথকে দেখা - রথদেখা
(খ) তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্ব পদের তৃতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- দা দিয়ে কাটা – দা-কাটা
- ঢেঁকি দ্বারা ছাটা- ঢেঁকিছাটা
- শ্রম দ্বারা লব্ধ -শ্রমলব্ধ
- মধু দিয়ে মাখা - মধুমাখা
- সৰ্প কর্তৃক দংশিত - সর্পদংশিত
- ডাকের জন্য মাশুল - ডাকমাশুল,
- হজ্বের জন্য যাত্রা - হজ্বযাত্রা
- তেল দ্বারা ভাজা - তেলভাজা
- এক দ্বারা উন - একোন
- পাঁচ দ্বারা কম - পাঁচকম।
(গ) চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- দেবকে দত্ত – দেবদত্ত
- গুরুকে ভক্তি – গুরুভক্তি
(ঘ) পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্ব পদের পঞ্চমী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
লোক হতে ভয়- লোকভয়
- জেল হতে খালাস- জেলখালাস
- বিলাত থেকে ফেরৎ - বিলাতফেরৎ
- গাছ থেকে পড়া গাছ পড়া
- পদ হতে চ্যুত -পদচ্যুত
- স্কুল হতে পালানো - স্কুলপালানো।
- জন্ম হতে জন্ম- জন্মান্ধ
- আদি হতে অন্ত - আদ্যন্ত।
- রাজার সভা রাজসভা
- হাঁসের রাজা- রাজহাঁস
- মৌ এর চাক – মৌচাক
- রাজার পুত্র - রাজপুত্র
- কুকুরের ছানা - কুকুরছানা
- পরের অধীন – পরাধীন
- রান্নার ঘর রান্নাঘর
- ভাইয়ের পো – ভাইপো
দ্রষ্টব্য: ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজার' স্থলে 'রাজ' হয়। যেমন—
- রাজার পুত্র - রাজপুত্র;
- রাজার দরবার - রাজদরবার
‘রাজা' শব্দটি শ্রেষ্ঠ অর্থে ব্যাস বাক্যের পরে ব্যবহৃত হলে, সমস্তপদে তা আগে চলে আসে। যেমন—
- পথের রাজা - রাজপথ;
- হাঁসের রাজা রাজহাস।
এছাড়াও ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘পিতা’, ‘মাতা’, ‘ভ্রাতার’ স্থানে যথাক্রমে ‘পিতৃ’ ‘মাতৃ' 'ভ্রাতৃ’ হয়। যেমন—
- পিতার ধন – পিতৃধন
- মাতার সেবা - মাতৃসেবা
- ভ্রাতার স্নেহ - ভ্রাতৃস্নেহ
(চ) সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- রাতে কানা- রাতকানা
- তেলে ভাজা- তেলভাজা
- রণে পটু - রণপটু
- তালে কানা - তালকানা
- গোলাতে ভরা - গোলাভরা
- গালে ভরা- গালভরা, ইত্যাদি।
দ্বন্দ্ব সমাস সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন এখানে
- নয় অন্ত- অনন্ত
- নয় মিল- অমিল
- নয় আচার- অনাচার
সুপ্সুপা সমাসঃ সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে তৎসম শব্দের পূর্বপদটি নিপাত হলে তাকে সুত্সুপা সমাস বলে। যেমন-
- পূর্বেভূত - ভূতপূর্ব;
- পূর্বে অদৃষ্ট - অদৃষ্টপূর্ব;
- পূর্বে অজ্ঞাত - অজ্ঞাতপূর্ব
উপপদ তৎপুরুষ সমাস: উপপদ বা বিশেষ্য পদের সাথে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে।
- পকেট মারে যে পকেটমার
- ছেলে ধরে যে ছেলেধরা
- যাদু করে যে - যাদুকর
- জল দেয় যে/যা- জলদ
- পঙ্কে জন্মে যে- পঙ্কজ
- পা দ্বারা পান করে যে - পাদপ
প্রাদি সমাসঃ যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে প্র, পরা, প্রতি, অনু, বি প্রভৃতি উপসর্গ বসে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন-
- প্ৰ (প্ৰকৃষ্ট) ভাত- প্রভাত;
- প্র (প্রকৃষ্ট) বচন- প্র-যে বচন