সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
ব্যাখ্যা: কবি সবসময়ই তাঁর শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভাবেন। দূর প্রবাসে গিয়েও কবি তার প্রিয় নদের কথা ভুলতে পারেন নি।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
ব্যাখ্যা: কবির চেতনায় কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি সদা জাগ্রত। কবি যখন রাতে নিদ্রাযাপন করেন তখনও কপোতাক্ষ নদের স্রোত প্রবাহের ধ্বনি তাঁর স্বপ্নে এসে হাজির হয়। স্বপ্নে কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি কবিকে সুখের অনুভূতি দেয়।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
ব্যাখ্যা: কবি মধুসূদন দত্ত দেশ-বিদেশের অনেক নদ-নদীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কিন্তু
কোনো নদীই তাঁকে কপোতাক্ষ নদের মত বিমোহিত করতে পারে নি।
বঙ্গবাণী কবিতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এই লিঙ্কে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
ব্যাখ্যা: মায়ের স্নেহ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ কবিকে বড় করেছে। এই নদের
জলেই কবি তাঁর স্নেহ তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন। এই কারণেই কবি কপোতাক্ষ নদের জলকে পরম মমতাময়ী
মায়ের দুধের সাথে। প্রবাসী কবি কপোতাক্ষ নদের চিন্তায় বিভোর থাকেন। প্রিয় নদের সাথে
কবির আর দেখা হবে কিনা- সেই চিন্তা কবি হৃদয়কে ব্যথিত করে তুলে।
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
ব্যাখ্যা: প্রজারা যেমন রাজাকে কর প্রদান করে তেমনি
কপোতাক্ষ নদও তার জলধারাকে কর হিসেবে সাগরের কাছে প্রেরণ করেছে।
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।
ব্যাখ্যা: কবির আকুল মিনতি-কপোতাক্ষ নদ যখন বঙ্গবাসীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে
যাবে, তখন কপোতাক্ষ নদ যেন কবির কথা বঙ্গবাসীকে জানিয়ে যায়।প্রবাসে অবস্থান করলেও কবির মন সর্বদা তার প্রিয় মাতৃভূমির কপোতাক্ষ
নদের চিন্তায় বিভোর। দূর প্রবাসে বসেও বঙ্গসঙ্গীতের মাধ্যমে কবি তাঁর অতি প্রিয় শৈশবের
স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা স্মরণ করছেন।