কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? কর্মধারয় সমাস চেনার উপায় কী?

 


কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? কর্মধারয় সমাস চেনার উপায় কী?

যে সমাসে উভয়পদের একটি বিশেষ্য অপরটির বিশেষণ এবং উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

  • কাঁচা যে কলা- কাঁচাকলা
  • ভাজা যে আলু- আলুভাজা


কর্মধারয় সমাস চেনার উপায়

(১) বিশেষ্য + বিশেষণ : (এ ক্ষেত্রে বিশেষণ পদটি ব্যাসবাক্যের পূর্বে বসে।)

  • বাটা যে হলুদ হলুদবাটা
  • ভাজা যে আলু - আলুভাজা,
  • অথম যে নর- নরাধম;
  • ভাজা যে চাল = চালভাজা
  • উত্তম যে নর - নরোত্তম
  • পোড়া যে বেগুন - বেগুনপোড়া;
(২) বিশেষণ + বিশেষ্য :
  • কাঁচা যে কলা-কাঁচকলা
  • নীল যে পদ্ম-নীলপদ্ম
  • গুণি যে জন-গুণিজন
  • ক্ষুধিত যে পাষাণ-ক্ষুধিতপাষাণ
  • মহৎ যে আত্মা-মহাত্মা
  • সৎ যে লোক-সৎলোক
(৩) বিশেষ্য + বিশেষ্য : (এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাসবাক্যে যিনি তিনি, যে-সে, যাহা-তাহা, যা-তা, যেই-সেই, ইত্যাদি সর্বনাম বা অব্যয়পদ উভয় পদের পূর্বে ব্যবহৃত হয়। তবে অসংলগ্ন অর্থের সম্ভাবনা থাকলে উভয় পদের মাঝে ‘অথচ’ ব্যবহার করা চলে)

যেমন- 

  • যিনি মৌলভী তিনিই সাহেব = মৌলভীসাহেব;
  • যিনি ঠাকুর তিনিই দাদা = ঠাকুরদাদা;
  • যিনি দাদা তিনিই ভাই - দাদাভাই
  • যিনি লাট তিনিই সাহেব = লাটসাহেব
  • যিনি রাজা তিনিই ঋষি- রাজা অথচ ঋষি/ রাজর্ষি।

(৪) বিশেষণ + বিশেষণ : (বিশেষ্য + বিশেষ্য এর মতো (৩নং) এক্ষেত্রেও যিনি-তিনি; যে- সে; যাহা-তাহা; যা-তা, ইত্যাদি সর্বনাম বা অন্যান্য পদ উভয় পদের সাথে যুক্ত হয়। আবার অসংলগ্ন। অর্থ প্রকাশের সম্ভবনা থাকলেও পূর্বের মতো ‘অথচ’ যুক্ত হতে পারে।) যেমন- 

  • যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর;
  • যাহা কাঁচা তাহাই মিঠা - কাঁচামিঠা, অথবা—কাঁচা অথচ মিঠা;
  • যিনি গণ্য তিনিই মান্য- গণ্যমান্য
  • আগে ধোয়া পরে মোছা - ধোয়ামোছা;
  • কিছু কাঁচা কিছু পাকা- কাঁচাপাকা
  • যে শান্ত সেই শিষ্ট - শান্তশিষ্ট
  • যাহা মিঠা তাহা কড়া - মিঠাকড়া

ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও কর্মধারয় সমানের ক্ষেত্রে আরও কিছু কথা মনে রাখা প্রয়োজন—

১. পূর্বপদে শ্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষবাচক হয়। যেমন

  • সুন্দরী যে- সুন্দরলতা,
  • মহতী যে কীর্তি- মহাকীর্তি।

২. বিশেষণবাচক 'মহান' বা 'মহৎ' শব্দ পূর্বপদে থাকলে 'মহৎ' বা 'মহান' পানে 'মহা' হয়। যেমন-

  • মহৎ যে জ্ঞান- মহাজ্ঞান
  • মহৎ যে কাব্য – মহাকাকব্য
  • মহান যে নবী মহানবী
  • মহান যে জন = মহাজন

৩. পূর্বপদে 'কু' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে 'কু' স্থানে 'কদ' হয়।

যেমন—

  • কু যে অর্থ কদর্থ,
  • কূ যে আচার- কদাচার,


কর্মধারয় সমাসের শ্রেণীবিভাগ: কর্মধারয় সমাস মূলত চার প্রকার। যথা-

(ক) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

(খ) উপমান কর্মধারয় সমাস

(গ) উপমিত কর্মধারয় সমাস

(ঘ) রূপক কর্মধারয় সমস।

(ক) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসঃ যে কর্মধারয় সমাসে বিশ্লেষণ মূলক মধ্যপদ ব্যাসবাক্য হতে লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।

যেমন-

  • মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি – মৌমাছি
  • সিংহ চিহ্নিত যে অসন সিংহাসন
  • পল মিশ্রিত যে অন্ন - পলান্ন।

(খ) উপমান কর্মধারয় সমাসঃ যার সাথে তুলনা করা হয় তাকে উপমান এবং যাকে তুলনা করা হয় তাকে উপমেয় বলে। উপমান পদের সাথে উপমেয়ের সাধারণ গুণবাচক পদের যে
সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। এ ক্ষেত্রে উপমের পদের উল্লেখ থাকে না।
যেমন-

মিশির ন্যায় কালো মিশকালো। এখানে 'মিশি' উপমান এবং ‘কালে"" সাধারণ গুণ বা সাধারণ ধর্ম (বিশেষণ)। উপমান কর্মধারয় সমাসের একটি পদ (পূর্বপদ) বিশেষ অন্যটি (পরপদ) বিশেষণ হয়ে থাকে। যেমন—'মিশি' বিশেষ্যপদ এবং 'কালো' বিশেষণ পদ।)

উদাহরণ :

  • শশকের ন্যায় ব্যস্ত - শশবাসত।
  • কুসুমের ন্যায় কোমল - কুসুমকোমল,
  • কাঠের ন্যায় কঠিন কাঠকঠিন।
  • হস্তির ন্যায় মূর্খ- হস্তিমূর্খ

(গ) উপমিত কর্মধারয় সম : সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমান ও উপমেয় পদের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।

উপমিত কর্মধারয় সমাসের উভয়পদ বিশেষ্য হয়। যেমন--

  • বাহু লতার ন্যায়- বাহুলতা
  • পুরুষ সিংহের ন্যায় – পুরুষসিংহ
  • চন্দ্রের ন্যায় মুখ- চন্দ্রমুখ;
  • নর সিংহের ন্যায় - নরসিংহ,
  • অধর পল্লবের ন্যায় অধরপল্লব,
  • নয়ন কমলের ন্যায় নয়নকমল।
  • চক্ষু পদ্মের ন্যায় বা পদ্মের ন্যায় চক্ষু - পদ্মচক্ষু।
  • সোনার ন্যায় মুখ - সোনামুখ

উপমিত কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্য গঠনে একটি ভ্রান্ত ধারণা


উপমিত কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্য গঠন নিয়ে অনেকে একটি ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। ধারণাটি হচ্ছে, ‘ন্যায়’ বা ‘মতো' বা 'তুল্যশব্দটি ব্যাসবাক্যের শেষে বসাতে হবে। বোধহয় তাদের ধারণা, “ন্যায়’ মাঝে থাকলে উপমান আর 'ন্যায়' বাক্যের শেষে থাকলে উপমিত হবে। উপমানে যেহেতু সাধারণধর্ম বা বিশেষণ পদটি শেষে থাকে এবং উপমান (পূর্বপদ) পদের সাথে তুলনা হয় সে কারণেই স্বাভাবিক ভাবেই এখানে ন্যায়' শব্দটি বাক্যের মাঝে এসে যায়। আর উপমিতে বাক্যের অর্থ সঠিক রেখে ‘ন্যায়’ শব্দটি বাক্যের মাঝে বা শেষে ব্যবহার করা যায়। যেমন— চন্দ্রমুখ – চন্দ্রের ন্যায় মুখ' অথবা 'মুখ চন্দ্রের ন্যায়'। ‘চন্দ্রের ন্যায় মুখ’-এ বাক্যটিতে ‘মুখ’কে চন্দ্রের সৌন্দর্যের সাথে এবং ‘মুখ চন্দ্রের ন্যায়’ বাক্যটিতেও ‘মুখ’কে চন্দ্রের সৌন্দর্যের সাথেই তুলনা করা হয়েছে। 'ন্যায়’ মাঝে বা শেষে ব্যবহার করা হলেও বাক্যের অর্থ একইরূপ রয়ে গেছে। তবে বাক্যের অর্থ ঠিক না রেখে যদি ‘মুখের ন্যায় চন্দ্র’ বা ‘চন্দ্র মুখের ন্যায়’ বলা হয়, তাহলে তা সঠিক বাক্য হবে না। উপমান বা উপমিত কর্মধারয় সমাস নির্ণয় বা চেনার সহজ ও প্রকৃত উপায় হচ্ছে সাধারণধর্ম বা বিশেষণ পদ।

(ঘ) রূপক কর্মধারয় সমাসঃ

উপমান এবং উপমেয়ের মধ্যে অভেদকল্পনা করে যে সমাস হয় তাকে রূপক 
কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-

  • মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
  • বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু
  • ক্ষুধা রূপ অনল = ক্ষুধানল
  • বিদ্যা রূপ ধন = বিদ্যাধন
  • দিল রূপ দরিয়া = দিলদরিয়া
  • শোক রূপ অনল- শোকানল
  • ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল
  • অমৃত রূপ বচন- অমৃতবচন

বিগত বছরের বোর্ড পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সমাধান


সমাসবদ্ধ পদ            ব্যাসবাক্য                সমাসের নাম            বোর্ড ও সাল

চালাকচতুর            যে চালাক সে চতুর       কর্মধারয়                     -

জজসাহেব             যিনি জজ তিনি সাহেব    কর্মধারয়                     -  

ধোয়ামোছা             আগে ধোয়া পরে মোছা   কর্মধারয়                     - 

সুন্দরলতা             সুন্দরী যে লতা            কর্মধারয়                   দি বো’১৪

মহাকীর্তি              মহতী যে কীর্তি            কর্মধারয়              রা বো;২০, য বো’১৯, সি বো;১৭

মহাজ্ঞান               মহৎ যে জ্ঞান             কর্মধারয়                 সি বো’২০

মহানবী                মহান যে নবী             কর্মধারয়                সি বো’ ১২,০৪

মহারাজ                মহান যে রাজা            কর্মধারয়                য বো’ ০৯

আলুসিদ্ধ               সিদ্ধ যে আলু             কর্মধারয়                কু বো’১৭

নরাধম                অধম যে নর              কর্মধারয়                    -

সিংহাসন              সিংহ চিহ্নিত যে আসন    মধ্যপদলোপী                 -

সাহিত্যসভা            সাহিত্য বিষয়ক সভা       মধ্যপদলোপী       ঢা বো’২০

স্মৃতিসৌধ            স্মৃতি রক্ষার্থে যে সৌধ       মধ্যপদলোপী      কু বো’ ১৫,১২

তুষারশুভ্র            তুষারের ন্যায় শুভ্র           উপমান            রা বো’১৪, য বো’১১

অরুণরাঙা            অরুণের ন্যায় রাঙা         উপমান            দি বো’২০, ব’ বো’১৯,১৬, ঢ বো’১৬

কাজলকালো        কাজলের ন্যায় কালো         উপমান            রা বো’১১, চ বো’০৪, য বো’২০০০

কুসুমকোমল        কুসুম কমলের ন্যায়           উপমান            রা বো’১১, চ বো’০৪, য বো’২০০০

ভ্রমরকৃষ্ণকেশ      ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ       উপমান            য বো’২০০০
        
সিংহপুরুষ        পুরুষ সিংহের ন্যায়            উপমিত             কু বো’১৩

চন্দ্রমুখ            মুখ চন্দ্রের ন্যায়              উপমিত             চ, সি বো’১৫

ফুলকুমারী        কুমারী ফুলের ন্যায়            উপমিত             রা বো’০৯

করপল্লব        কর পল্লবের ন্যায়               উপমিত             ঢা বো’১০ 

ক্রোধানল        ক্রোধ রূপ অনল                রূপক              য বো’০৭

বিষাদসিন্ধু       বিষাদ রূপ সিন্ধু                রূপক               সি বো’০১

মনমাঝি        মন রূপ মাঝি                    রূপক              ঢা বো’০৮

        



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন