প্রশ্ন: সমাস কাকে বলে। সমাসের প্রয়োজনীয়তা ও প্রকারভেদ আলোচনা কর।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা
সমাসের প্রকারভেদ
যেমন-
- বাবা ও মা বাবা-মা,
- হাট ও বাজার- হাটবাজার
- ছেলে ও মেয়ে- ছেলেমেয়ে
দ্বন্দ্ব সমাস নানা শ্রেণীর হতে পারে। যেমন—
(ক) সাধারণ দ্বন্দ্ব : উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য একাধিক পদের একত্রে অবস্থানকে
সাধারণ দ্বন্দ্ব বলে।
যেমন—
- ফল ও মূল- ফলমূল;
- আনা ও গোনা- আনাগোনা
- সাত ও পাঁচ - সাতপাঁচ
(খ) মিলনার্থক দ্বন্দ্ব : সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদের মিলন বা সম্পর্ক বুঝালে
মিলনার্থক দ্বন্দ্ব হয়।
যেমন—
- বাবা ও মা = বাবা-মা,
- ভাই ও বোন = ভাইবোন
- হাত ও পা- হাত-পা
(গ) বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব: পাশাপাশি বিপরীত
অর্থযুক্ত শব্দ বা বিরোধার্থক শব্দ থাকলে বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব সমাস হয়।
যেমন—
- সত্য ও মিথ্যা = সত্যমিথ্যা;
- আসল ও নকল- আসল নকল
- অহি ও নকুল = অহিনকুল ইত্যাদি।
(ঘ) সমার্থক দ্বন্দ : একই অর্থযুক্ত শব্দ পাশাপাশি থাকলে সমার্থক দ্বন্দ্ব হয়।
যেমন—
- টাকা ও পয়সা = টাকা পয়সা;
- বই ও পত্র বইপত্র;
- অন্য ও অন্য = অন্যান্য
(ঙ) অলুক দ্বন্দ : অলোপ থেকে অলুক হয়েছে। অর্থৎ বিভক্তি লোপ না পেলে অলুক
দ্বন্দ্ব হয়।
যেমন—
- ঘরে ও বাহিরে = ঘরে-বাহিরে;
- পথে ও ঘাটে = পথে-ঘাটে;
- আদায় ও কাঁচকলায়- আদায় কাঁচকলায় ।
(চ) একশেষ দ্বন্দ্ব: একটি শব্দ অথচ সেখানে
একাধিক পদ রয়েছে এরূপ বুঝালে একশেষ দ্বন্দ্ব হয়।
যেমন—
- জায়া ও পতি = দম্পতি
- সে, তুমি ও আমি = আমরা
(ছ) সর্বনাম পদের দ্বন্দ্ব : উভয়পদ সর্বনাম হলে সর্বনাম পদের
দ্বন্দ্ব সমাস হয়।
যেমন—
- যা ও তা- যা-তা
- যেমন ও তেমন যেমন-তেমন
- যে ও সে- যে-সে
(জ) বহুপদী দ্বন্দ্ব : যে সমাসে কয়েকটি পদের মিলন হয় তাকে বহুপদী
দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
- সাহেব বিবি গোলাম- সাহেব, বিবি ও গোলাম
- নাক-কান-গলা; যেমন—নাক, কান ও গলা
যেমন—
- জায়া ও পতি দম্পতি;
- মাতা ও পিতা- মাতাপিতা
(ঞ) ক্রিয়াবাচক দ্বন্দ্ব : সমার্থক, বিপরীত বা ভিন্নার্থে দুই পদে ক্রিয়া থাকলে
ক্রিয়াবাচক দ্বন্দ্ব সমাস হয়।
যেমন–
- চলা ও ফেরা চলাফেরা
- যাওয়া ও আসা- যাওয়া আসা
- দেখা ও শোনা- দেখা-শোনা
(ট) সংখ্যাবাচক দ্বন্দ্ব : উভয়পদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকলে
সংখ্যাবাচক দ্বন্দ্ব সমাস হয়।
যেমন—
- নয় ও ছয় নয়-ছয়;
- সাত ও পাঁচ সাত-পাঁচ
- উনিশ ও বিশ- উনিশ-বিশ
দ্বন্দ্ব সমাসের সম্পর্কে জানুন এখানে
কর্মধারয়
যে সমাসে উভয়পদের একটি বিশেষ্য অপরটির বিশেষণ এবং উত্তরপদের অর্থ
প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।
- কাঁচা যে কলা- কাঁচাকলা
- ভাজা যে আলু- আলুভাজা
বিভিন্নভাবে কর্মধারয় সমাস সাধিত হয়। যেমন-
(১) বিশেষ্য + বিশেষণ : (এ ক্ষেত্রে বিশেষণ পদটি ব্যাসবাক্যের পূর্বে বসে।)
- বাটা যে হলুদ হলুদবাটা
- ভাজা যে আলু - আলুভাজা,
- অথম যে নর- নরাধম;
- ভাজা যে চাল = চালভাজা
- উত্তম যে নর - নরোত্তম
- পোড়া যে বেগুন - বেগুনপোড়া;
- কাঁচা যে কলা-কাঁচকলা
- নীল যে পদ্ম-নীলপদ্ম
- গুণি যে জন-গুণিজন
- ক্ষুধিত যে পাষাণ-ক্ষুধিতপাষাণ
- মহৎ যে আত্মা-মহাত্মা
- সৎ যে লোক-সৎলোক
কর্মধারয় সমাস সম্পর্কে জানুন এখানে
যেমন-
- যিনি মৌলভী তিনিই সাহেব = মৌলভীসাহেব;
- যিনি ঠাকুর তিনিই দাদা = ঠাকুরদাদা;
- যিনি দাদা তিনিই ভাই - দাদাভাই
- যিনি লাট তিনিই সাহেব = লাটসাহেব
- যিনি রাজা তিনিই ঋষি- রাজা অথচ ঋষি/ রাজর্ষি।
(৪) বিশেষণ + বিশেষণ : (বিশেষ্য + বিশেষ্য এর মতো (৩নং) এক্ষেত্রেও যিনি-তিনি; যে- সে; যাহা-তাহা; যা-তা, ইত্যাদি সর্বনাম বা অন্যান্য পদ উভয় পদের সাথে যুক্ত হয়। আবার অসংলগ্ন। অর্থ প্রকাশের সম্ভবনা থাকলেও পূর্বের মতো ‘অথচ’ যুক্ত হতে পারে।) যেমন-
- যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর;
- যাহা কাঁচা তাহাই মিঠা - কাঁচামিঠা, অথবা—কাঁচা অথচ মিঠা;
- যিনি গণ্য তিনিই মান্য- গণ্যমান্য
- আগে ধোয়া পরে মোছা - ধোয়ামোছা;
- কিছু কাঁচা কিছু পাকা- কাঁচাপাকা
- যে শান্ত সেই শিষ্ট - শান্তশিষ্ট
- যাহা মিঠা তাহা কড়া - মিঠাকড়া
ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও কর্মধারয় সমানের ক্ষেত্রে আরও কিছু কথা মনে রাখা প্রয়োজন—
১. পূর্বপদে শ্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষবাচক হয়। যেমন
- সুন্দরী যে- সুন্দরলতা,
- মহতী যে কীর্তি- মহাকীর্তি।
২. বিশেষণবাচক 'মহান' বা 'মহৎ' শব্দ পূর্বপদে থাকলে 'মহৎ' বা 'মহান' পানে 'মহা' হয়। যেমন-
- মহৎ যে জ্ঞান- মহাজ্ঞান
- মহৎ যে কাব্য – মহাকাকব্য
- মহান যে নবী মহানবী
- মহান যে জন = মহাজন
৩. পূর্বপদে 'কু' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে 'কু'
স্থানে 'কদ' হয়।
যেমন—
- কু যে অর্থ কদর্থ,
- কূ যে আচার- কদাচার,
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণীবিভাগ: কর্মধারয় সমাস মূলত চার প্রকার। যথা-
(ক) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
(খ) উপমান কর্মধারয় সমাস
(গ) উপমিত কর্মধারয় সমাস
(ঘ) রূপক কর্মধারয় সমস।
(ক) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসঃ যে কর্মধারয় সমাসে বিশ্লেষণ মূলক
মধ্যপদ ব্যাসবাক্য হতে লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন-
- মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি – মৌমাছি
- সিংহ চিহ্নিত যে অসন সিংহাসন
- পল মিশ্রিত যে অন্ন - পলান্ন।
(খ) উপমান কর্মধারয় সমাসঃ যার সাথে তুলনা করা হয় তাকে উপমান এবং যাকে তুলনা করা হয়
তাকে উপমেয় বলে। উপমান পদের সাথে উপমেয়ের সাধারণ গুণবাচক পদের যে
সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। এ ক্ষেত্রে উপমের পদের উল্লেখ থাকে না।
যেমন-
মিশির ন্যায় কালো মিশকালো। এখানে 'মিশি' উপমান এবং ‘কালে"" সাধারণ গুণ বা সাধারণ ধর্ম (বিশেষণ)। উপমান কর্মধারয় সমাসের একটি পদ (পূর্বপদ) বিশেষ অন্যটি (পরপদ) বিশেষণ হয়ে থাকে। যেমন—'মিশি' বিশেষ্যপদ এবং 'কালো' বিশেষণ পদ।)
উদাহরণ :
- শশকের ন্যায় ব্যস্ত - শশবাসত।
- কুসুমের ন্যায় কোমল - কুসুমকোমল,
- কাঠের ন্যায় কঠিন কাঠকঠিন।
- হস্তির ন্যায় মূর্খ- হস্তিমূর্খ
(গ) উপমিত কর্মধারয় সম : সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমান ও
উপমেয় পদের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
উপমিত কর্মধারয় সমাসের উভয়পদ বিশেষ্য হয়। যেমন--
- বাহু লতার ন্যায়- বাহুলতা
- পুরুষ সিংহের ন্যায় – পুরুষসিংহ
- চন্দ্রের ন্যায় মুখ- চন্দ্রমুখ;
- নর সিংহের ন্যায় - নরসিংহ,
- অধর পল্লবের ন্যায় অধরপল্লব,
- নয়ন কমলের ন্যায় নয়নকমল।
- চক্ষু পদ্মের ন্যায় বা পদ্মের ন্যায় চক্ষু - পদ্মচক্ষু।
- সোনার ন্যায় মুখ - সোনামুখ
উপমিত কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্য গঠন নিয়ে অনেকে একটি ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। ধারণাটি হচ্ছে, ‘ন্যায়’ বা ‘মতো' বা 'তুল্য' শব্দটি ব্যাসবাক্যের শেষে বসাতে হবে। বোধহয় তাদের ধারণা, “ন্যায়’ মাঝে থাকলে উপমান আর 'ন্যায়' বাক্যের শেষে থাকলে উপমিত হবে। উপমানে যেহেতু সাধারণধর্ম বা বিশেষণ পদটি শেষে থাকে এবং উপমান (পূর্বপদ) পদের সাথে তুলনা হয় সে কারণেই স্বাভাবিক ভাবেই এখানে ন্যায়' শব্দটি বাক্যের মাঝে এসে যায়। আর উপমিতে বাক্যের অর্থ সঠিক রেখে ‘ন্যায়’ শব্দটি বাক্যের মাঝে বা শেষে ব্যবহার করা যায়। যেমন— চন্দ্রমুখ – চন্দ্রের ন্যায় মুখ' অথবা 'মুখ চন্দ্রের ন্যায়'। ‘চন্দ্রের ন্যায় মুখ’-এ বাক্যটিতে ‘মুখ’কে চন্দ্রের সৌন্দর্যের সাথে এবং ‘মুখ চন্দ্রের ন্যায়’ বাক্যটিতেও ‘মুখ’কে চন্দ্রের সৌন্দর্যের সাথেই তুলনা করা হয়েছে। 'ন্যায়’ মাঝে বা শেষে ব্যবহার করা হলেও বাক্যের অর্থ একইরূপ রয়ে গেছে। তবে বাক্যের অর্থ ঠিক না রেখে যদি ‘মুখের ন্যায় চন্দ্র’ বা ‘চন্দ্র মুখের ন্যায়’ বলা হয়, তাহলে তা সঠিক বাক্য হবে না। উপমান বা উপমিত কর্মধারয় সমাস নির্ণয় বা চেনার সহজ ও প্রকৃত উপায় হচ্ছে সাধারণধর্ম বা বিশেষণ পদ।
(ঘ) রূপক কর্মধারয় সমাসঃউপমান এবং উপমেয়ের মধ্যে অভেদকল্পনা করে যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-
- মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
- বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু
- ক্ষুধা রূপ অনল = ক্ষুধানল
- বিদ্যা রূপ ধন = বিদ্যাধন
- দিল রূপ দরিয়া = দিলদরিয়া
- শোক রূপ অনল- শোকানল
- ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল
- অমৃত রূপ বচন- অমৃতবচন
(ক) দ্বিতীয়া তৎপুরুষ
(খ) তৃতীয় তৎপুরুষ
(গ) চতুর্থী তৎপুরুষ
(ঘ) পঞ্চমী তৎপুরুষ
(ঙ) ষষ্ঠী তৎপুরুষ
(চ) সপ্তমী তৎপুরুষ
এছাড়াও তৎপুরুষ সমাসের আরো কয়েকটি শাখা রয়েছে। যথা—অলুক তৎপুরুষ, নঞ তৎপুরুষ, উপপদ
তৎপুরুষ ও সুপ্সুপা সমাস।
(ক) দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয়
তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- গা-কে ঢাকা - গা-ঢাকা
- জলকে তোলা – জলতোলা
- ভাতকে রাঁধা - ভাতরাধা
- ফুলকে তোলা - ফুলতোলা
- বধূকে বরণ - বধূবরণ
- কলাকে বেচা - কলাবেচা,
- ছেলেকে ভুলানো - ছেলেভুলানো
- রথকে দেখা - রথদেখা
(খ) তৃতীয়া
তৎপুরুষ সমাস : পূর্ব পদের তৃতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ
সমাস বলে। যেমন-
- দা দিয়ে কাটা – দা-কাটা
- ঢেঁকি দ্বারা ছাটা- ঢেঁকিছাটা
- শ্রম দ্বারা লব্ধ -শ্রমলব্ধ
- মধু দিয়ে মাখা - মধুমাখা
- সৰ্প কর্তৃক দংশিত - সর্পদংশিত
- ডাকের জন্য মাশুল - ডাকমাশুল,
- হজ্বের জন্য যাত্রা - হজ্বযাত্রা
- তেল দ্বারা ভাজা - তেলভাজা
- এক দ্বারা উন - একোন
- পাঁচ দ্বারা কম - পাঁচকম।
(গ) চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- দেবকে দত্ত – দেবদত্ত
- গুরুকে ভক্তি – গুরুভক্তি
(ঘ) পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্ব পদের পঞ্চমী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে
সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
লোক হতে ভয়- লোকভয়
- জেল হতে খালাস- জেলখালাস
- বিলাত থেকে ফেরৎ - বিলাতফেরৎ
- গাছ থেকে পড়া গাছ পড়া
- পদ হতে চ্যুত -পদচ্যুত
- স্কুল হতে পালানো - স্কুলপালানো।
- জন্ম হতে জন্ম- জন্মান্ধ
- আদি হতে অন্ত - আদ্যন্ত।
- রাজার সভা রাজসভা
- হাঁসের রাজা- রাজহাঁস
- মৌ এর চাক – মৌচাক
- রাজার পুত্র - রাজপুত্র
- কুকুরের ছানা - কুকুরছানা
- পরের অধীন – পরাধীন
- রান্নার ঘর রান্নাঘর
- ভাইয়ের পো – ভাইপো
দ্রষ্টব্য: ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজার' স্থলে 'রাজ' হয়। যেমন—
- রাজার পুত্র - রাজপুত্র;
- রাজার দরবার - রাজদরবার
‘রাজা' শব্দটি শ্রেষ্ঠ অর্থে ব্যাস বাক্যের পরে ব্যবহৃত হলে, সমস্তপদে তা আগে চলে আসে। যেমন—
- পথের রাজা - রাজপথ;
- হাঁসের রাজা রাজহাস।
এছাড়াও ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘পিতা’, ‘মাতা’, ‘ভ্রাতার’ স্থানে যথাক্রমে ‘পিতৃ’ ‘মাতৃ' 'ভ্রাতৃ’ হয়। যেমন—
- পিতার ধন – পিতৃধন
- মাতার সেবা - মাতৃসেবা
- ভ্রাতার স্নেহ - ভ্রাতৃস্নেহ
(চ) সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে
সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
- রাতে কানা- রাতকানা
- তেলে ভাজা- তেলভাজা
- রণে পটু - রণপটু
- তালে কানা - তালকানা
- গোলাতে ভরা - গোলাভরা
- গালে ভরা- গালভরা, ইত্যাদি।
- নয় অন্ত- অনন্ত
- নয় মিল- অমিল
- নয় আচার- অনাচার
সুপ্সুপা সমাসঃ সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে তৎসম শব্দের পূর্বপদটি নিপাত
হলে তাকে সুত্সুপা সমাস বলে। যেমন-
- পূর্বেভূত - ভূতপূর্ব;
- পূর্বে অদৃষ্ট - অদৃষ্টপূর্ব;
- পূর্বে অজ্ঞাত - অজ্ঞাতপূর্ব
উপপদ তৎপুরুষ সমাস: উপপদ বা বিশেষ্য পদের সাথে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে।
- পকেট মারে যে পকেটমার
- ছেলে ধরে যে ছেলেধরা
- যাদু করে যে - যাদুকর
- জল দেয় যে/যা- জলদ
- পঙ্কে জন্মে যে- পঙ্কজ
- পা দ্বারা পান করে যে - পাদপ
প্রাদি সমাসঃ
যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে প্র, পরা, প্রতি, অনু, বি প্রভৃতি উপসর্গ বসে বিশেষ
অর্থ প্রকাশ করে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন-
- প্ৰ (প্ৰকৃষ্ট) ভাত- প্রভাত;
- প্র (প্রকৃষ্ট) বচন- প্র-যে বচন
তৎপুরুষ সমাস আলোচনা দেখুন
দ্বিগু সমাস
সংজ্ঞা ও পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ বসে সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে বিশেষ্য পদের ত্রিফলা; সপ্ত সাথে যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন—
- তিন ফলের সমাহার- ত্রিফলা।
- সপ্ত অহের সমাহার - সপ্তাহ ।
দ্বিগু সমাস কর্মধারয় সমাসের পর্যায়ে পড়ে এবং সমাস নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ
হয়। দ্বিগু সমাসে কখনো কখনো অ-কারন্ত স্থলে আ-কারন্ত বা ই-কারন্ত হয়।
উদাহরণ :
- সে (তিন) তারের সমাহার সেতার
- দশচক্র- দশ চক্রের সমাহার
- ত্রি (তিন) পদের সমাহার - ত্রিপদী
- শত অব্দের সমাহার- শতাব্দী
- ছয় (ষড়) ঋতুর সমাহার - ষড়ঋতু
- তে (তিন) মাথার সমাহার - তেমাথা ইত্যাদি
বহুব্রীহি
সমাস
সংজ্ঞাঃ যে সমাসে সমস্যামান পদগুলোর অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে
অন্য কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা অন্য কোনো কিছুকে ইঙ্গিত করা হয় তাকে বহুব্রীহি সমাস
বলে।
যেমন—আশীতে বিষ আছে যার - আশীবিষ। এখানে ‘আশী’ বা ‘বিষ’ এর অর্থকে
প্রধানভাবে না বুঝিয়ে সাপকে বুঝানো হয়েছে। আমার মতে বহুব্রীহি সমাস
ক. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
খ. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি
গ. ব্যতিহার বহুব্রীহি
ঘ. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহিঙ. নঞ বহুব্রীহি
চ. উপমাত্মক বহুব্রীহি
ছ. দ্বিগু/ সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
জ. অলুক বহুব্রীহি
ঝ. সহার্থক বহুব্রীহি
ঞ. উপপদ বহুব্রীহি সমাস
ক. সমানাধিকরণ: বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ ও উত্তরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন-
- ভাগ্য হত হয়েছে যার হতভাগ্য
- গৌর বর্ণ অঙ্গ যার - গৌরাঙ্গ
- বদ মেজাজ যার বদমেজাজী
- উন কম পাঁজর যার - উনপঁজুরে
- দশ আনন যার দশানন, ইত্যাদি।
- পঙ্ক কেশ যার- পক্ককেশ
- বীণা পানিতে যার - বীণাপানি
- আশীতে (দাঁত) বিষ আছে যার - আশীবিষ
- কানে কানে যে কথা - কানাকানি;
- হাতে হাতে যে লড়াই - হাতাহাতি
- এক দিকে চোখ যার- একচোখা
- হরেক রকম বুলি যার- হরবোলা
- মৃগের নয়নের ন্যায় নয়ন যার- মৃগনয়না
ঙ. উপমাত্মক বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে একটি উপমানপদ থাকে তাকে
উপমাত্মক বহুব্রীহি বলে। যেমন—
- দিল দরিয়ার মতো যার = দিলদরিয়া
- হাঁড়ির মতো মুখ যার হাঁড়ি মুখো
- কমলের ন্যায় অক্ষি যার-কমলাক্ষ
- চন্দ্রের ন্যায় মুখ যার = চন্দ্রমুখী।
- সে (তিন) তার যাতে- সেতার
- পাঁচ সের ওজন যার -পাঁচসেরী
- বিশ গজ পরিমাপ যাহা - বিশগজী
- দুই দিকে অপ যেখানে- দ্বীপ
- গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে - গায়ে হলুদ;
- মুখে ভাত দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে - মুখেভাত;
- কানে খাট যে - কানেখাট
- মাথায় পাগড়ি যার - মাথায়পাগড়ি, ইত্যাদি ।
- স্ত্রীর সহিত বর্তমান - সস্ত্রীক
- আদরের সহিত বর্তমান - সাদর
- সমান উদর যার - সহোদর
ঝ. উপপদ বহুব্রীহি: উপপদ বা বিশেষ্য পদের সাথে কৃদন্ত পদের যে বহুব্রীহি সমাস হয় এবং পূর্ব বা পরপদের প্রাধান্য না থেকে অন্য পদের প্রাধান্য থাকে তাকে উপপদ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন—
- বিনয়ের সাথে বর্তমান - সবিনয়
- সমান গোত্র যার- সগোত্র ইত্যাদি।
বহুব্রীহি সমাস বিস্তারিত এখানে
সংজ্ঞা: যে সমাসের পূর্বপদটি অব্যয়পদ এবং এই অব্যয়ের অর্থই প্রধানভাবে বুঝায় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন–
- ভাতের অভাব- হাভাত
- কূলের সমীপে = উপকূল ইত্যাদি।
অব্যয়ীভাব সমাসের অব্যয় পদটি কখনো কখনো সমীপে, অভাব, সাদৃশ্য বা সদৃশ, যোগ্যতা, পর্যন্ত, অতিক্রম, অতিক্রান্ত, পশ্চাৎ, পক্ষ, বিপক্ষ, বিরুদ্ধ, ক্ষুদ্র, বীপ্সা (পুনঃ পুনঃ অর্থে) প্রভৃতি অর্থে প্রকাশ পায়।
- গমনের পশ্চাৎ- অনুগমন
- ক্ষুদ্র অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ
- কণ্ঠ পর্যন্ত- আকণ্ঠ
- শক্তিকে অতিক্রম না করে- যথাশক্তি
- রূপের যোগ্য = অনুরূপ
- কথার সাদৃশ্য = উপকথা
- শ্রীর অভাব = বিশ্রী
- মূল পর্যন্ত = আমূল
- দিন দিন = প্রতিদিন (বীপ্সা অর্থে)
- কূলের সমীপে- উপকূল
- জীবন পর্যন্ত = যাবজ্জীবন
নিত্য সমাস
বাংলা সমাসে নিত্য সমাস নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাস পাওয়া যায়। বলা যায়, এ সমাসটি অন্যকোনো সমাসের সাথে অঙ্গীভূত না হয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অন্য সমাসগুলোর পাশে স্থান করে নিয়েছে।
- অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর
- অন্য কাল = কালান্তর
- বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ, ইত্যাদি।
সংজ্ঞা: যে সমাসের পদগুলো সবসময় সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য করার প্রয়োজন হয় না বা ব্যাসবাক্য হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন-
- কেবল জল - জলমাত্র
- সমস্ত গ্রাম - গ্রামসুদ্ধ
- কেবল দর্শন - দর্শনমাত্র
- অনেক মানুষ - মানুষগুলো
আরো দেখুন..............