উপন্যাস কী? উপন্যাসের উপাদান সম্পর্কে আলোচনা কর


 


উপন্যাস:- উপন্যাস এমন একটি সাহিত্যকর্ম যার কোনো বাঁধাধরা সংজ্ঞা নেই। তাই নানা জন উপন্যাসের নানা সংজ্ঞা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। কারও মতে উপন্যাস বা নভেল, গদ্যে আকারে লিখিত দীর্ঘ গল্প। {মুক্তধারাঃ বাংলা বিশ্বকোষঃ প্রথম খণ্ড পৃঃ৩৯৮}। কেউ কেউ বলেছেন, “গ্রন্থাকারে ব্যক্তিগত জীবন দর্শন ও জীবানুভূতি কোন বাস্তব কাহিনী অবলম্বন করিয়া যে বর্ণানাত্মক শিল্পকর্মে রূপায়িত হয়, তাহাকে উপন্যাস কহে। {শ্রী শ্রীচন্দ্র দাস; সাহিত্য সন্দর্শনঃ পৃ-১৪২}। উপন্যাসের অপেক্ষাকৃত সংহত সংজ্ঞা পাওয়া যায় ভারতকোষেকার্যকারণশৃঙ্খলিত, চরিত্রদ্যোতক ও জীবনস্বরূপ নির্দেশক কাহিনি-ই উপন্যাস। {বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদঃ ভারতকোষঃ প্রথম খ-ঃ পৃঃ৬৩১}

 

উপন্যাসের উপাদান:-

আখ্যান বা প্লট:- আখ্যান বা প্লট উপন্যাসের একটি অপরিহার্য উপাদান। কোন কাহিনি নিয়ে উপন্যাস রচিত হবে, তা নির্ভর করবে ঔপন্যাসিকের পরিকল্পনার ওপর। সেই কল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে তাঁর মানসিক প্রস্তুতির ওপর। কারণ কোনো উপন্যাস এক জায়হায় থেমে থাকে না বরং ক্রমশ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। এই আগানোর তার গতি। এই গতিপথ হবে সুশৃঙ্খলিত।

 

চরিত্র:- উপন্যাসের দ্বিতীয় উপাদান হচ্ছে চরিত্র। অতীতে উপন্যাসের চরিত্র ছিল একান্ত ব্যক্তিক। কিন্তু কাল প্রবাহে উপন্যাসের চরিত্রের সাথে যুক্ত হয়েছে সমসাময়িক সমাজ, পরিবেশ, সংস্কৃতি, সমাজচিন্তা, রাষ্ট্রচিন্তা ইত্যাদি। সামাজিক মানুষই উপন্যাসের চরিত্র হবে। আর সেই চরিত্রকে তিনি নির্মাণ করবেন সামাজিক প্রকিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে, সামাজিক মানুষ হিসেবে।

 

বর্ণনা বা প্রকাশ:- এটি উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্ণনা হবে কাহিনী ও চরিত্র নির্মাণের প্রয়োজনানুগ ও যথাযথ। সুন্দর সুসংহত বর্ণনা যে কাহিনীকে গতিময় করতে পারে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আবার বর্ণনার আধিক্যে কাহিনীর গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে বা কোনো চরিত্রের বিকাশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বর্ণনা সুসংহত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

 

ঐতিহাসিক উপন্যাস:- ইতিহাস, ইতিহাসের কাহিনী, ঘটনা এবং চরিত্র নিয়ে রচিত উপন্যাসকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে। কিন্তু ঔপন্যাসিকের মূল উদ্দেশ্য উপন্যাসের স্বার্থ সংরক্ষণ, ইতিহাস বিবরণ নয়। কিন্তু ঔপন্যাসিক তাঁর উপন্যাসের স্বার্থে কখন কখনও ইতিহাসের সীমা থেকে বাইরে এসে দাড়াতে পারেন। ইতিহাসের ব্যাপক ও বিস্তৃতি পটভূমি থেকে ঔপন্যাসিক তাঁর নির্বাচিত কাহিনীর প্রয়োজনীয় অংশটুকু শুধু সংগ্রহ করবেন। কয়েকটি ঐতিহাসিক উপন্যাস হল- বঙ্কিমের রাজসিংহ(১৮৮২) , রবীন্দ্রনাথের রাজর্ষী (১৮৮৭), শামসুদ্দিন আবুল কালামের ‘আলম নগরের উপকথা

 

সামজিক উপন্যাস:- সমাজ, সমাজের মানুষ, সেই মানুষের সুখ দুঃখ হাসি কান্না আনন্দ বেদনা ইত্যাদি নিয়ে যে উপন্যাস রচিত হয় তাকে সামাজিক উপন্যাস বলে। এক্ষেত্রে ঔপন্যাসিককে অবশ্যই সমাজ সচেতন থাকতে হবে। পল্লী সাজ, লালসালু, জননী ইত্যাদি সামাজিক উপন্যাস।

 

রাজনৈতিক উপন্যাস:- কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে রচিত উপন্যাসকেই রাজনৈতিক উপন্যাস বলে। নানা রাজনৈতিক মতবাদ ও চিন্তাধারা এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু হতে পারে। পথের দাবী, গোরা, ঘরে বাইরে এ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

 

রোমান্স উপন্যাসঃ- রোমান্স শব্দের অর্থ বিস্ময়কর কল্পিত কাহিনী উগ্র বা অস্বাভবিক প্রেম মূলক উপন্যাস। যে উপন্যাসে কাল্পনিক বা অস্বাভবিক উগ্রপ্রেমমূলক কাহিনী বিধৃত হয় তাকে রোমান্সধর্মী উপন্যাস বলা হয়। এই ধরণের উপন্যাসে বাস্তবতার থেকে আবেগপ্রবণতা বেশি থাকে। চরিত্র নির্মাণ হয়ে অবাস্তব কাল্পনিক পরিবেশে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ এ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন